আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি পুলিশের হামলায় ১৫৮ ফিলিস্তিনি আহত
জেরুজালেমের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শুক্রবার ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫৮ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর বলে আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোরের দিকে ইসরায়েলি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ জন প্যারামেডিক, ৩ জন সাংবাদিকসহ ৪০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানায়, ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদের সব দরজা বন্ধ করে দেয়। সেখানে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় এবং আহতদের মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে হাসপাতালে নিতে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে আটকে দেওয়া হয়।
পুলিশ আল-আকসার প্রহরী, প্রেস, মেডিকেল স্টাফ এবং রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসকের দিকে রাবার বুলেট এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেও অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়াও, ইসরায়েলি পুলিশের বিরুদ্ধে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি কেড়ে নেওয়া এবং আল-আকসা ক্লিনিককে ঘিরে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে কয়েক ডজন আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল বলে ফিলিস্তিনিদের দাবি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মসজিদ প্রাঙ্গনে উপস্থিত ব্যক্তিদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এই অভিযানের ফলে, ইসরায়েলি পুলিশ এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে শত শত ফিলিস্তিনি তরুণের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-আকসার সমর্থনে এবং ইহুদিদের পাসওভারের সময় মসজিদে ইসরায়েলিদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসেবে ভোরের নামাজের পরে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সময় ফিলিস্তিনি তরুণরা ইসরায়েলি পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ও আতশবাজি নিক্ষেপ করে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, শুক্রবারের নামাজের কিছুক্ষণ আগে আল-আকসার দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন ইসরায়েলি বাহিনী আল-আকসা আঙ্গিনা থেকে শত শত ফিলিস্তিনি যুবককে গ্রেপ্তার ও বের করে দেয়। সকালের সহিংসতার ফলে যারা জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে রমজানের দ্বিতীয় জুমার নামাজ আদায় করতে যান তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
আল-আকসা মসজিদের পরিচালক শেখ ওমর আল-কিসওয়ানি আরব নিউজকে বলেন, ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদে হামলা এবং শুক্রবার ভোরের দিকে সহিংস দমনের ফলে সেখানে আসা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। এখানে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ছিলেন এবং আমরা আশা করেছিলাম এই সংখ্যা ১ লাভ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে আল-আকসা মসজিদের আইন লঙ্ঘন করছে এবং মুসলমানদের উসকানি দিচ্ছে। ইসরায়েলিরা এই সংঘাতকে একটি ধর্মীয় সংঘাতে পরিণত করতে চায় এবং মসজিদের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে চায়।
ইসরায়েলি পুলিশের জারি করা এক বিবৃতিতে দাঙ্গা ও জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য ফিলিস্তিনিদের দায়ী করা হয়েছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শুক্রবার জুমার নামাজের পর আল-আকসায় ইসরাইলি পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে গণসমাবেশে অংশ নেয়।
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক টর ওয়েনল্যান্ড 'জেরুজালেমের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি' নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পবিত্র এসপ্ল্যানেডের ওপর উসকানি এখনই বন্ধ করতে হবে।
তিনি অবিলম্বে আল-আকসায় উসকানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে জাতিসংঘ প্রধান আঞ্চলিক অংশীদার এবং পক্ষগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। তিনি উভয়পক্ষের কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানিয়েছে জর্ডান। তারা আল-আকসা মসজিদ ও সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে।
Comments