শিমুলিয়া-বাংলাবাজার: ফেরি গতবার ছিল ১৩টি এবার ৬টি, তীব্র যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা

ঈদের সময় দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়াঘাট ব্যবহার করে যাতায়াত করেন কয়েক লাখ মানুষ। মহামারি শুরু হওয়ার আগে বা গত বছরের তুলনায় এবার ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় ঈদুল ফিতরের বন্ধে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরিয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

ঈদের সময় দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়াঘাট ব্যবহার করে যাতায়াত করেন কয়েক লাখ মানুষ। মহামারি শুরু হওয়ার আগে বা গত বছরের তুলনায় এবার ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় ঈদুল ফিতরের বন্ধে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরিয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ নৌপথে দীর্ঘদিন ধরেই ফেরি স্বল্পতার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। বর্তমানে এ নৌপথে ৮৬টি লঞ্চ, ১৫৩টি স্পিডবোট চলাচল করে।

শিমুলিয়াঘাট সূত্রে জানা গেছে, দিনের বেলা ৬টি ফেরি চললেও রাতে চলাচল করে ৪টি ফেরি। ২টি টানা ফেরি (ঠেলা ফেরি) বিকেলের পর থেকে নদীতে চলাচল করতে পারে না। করোনার আগে ঈদের সময় এই নৌপথে ১৭-১৮টি ফেরি চলাচল করলেও এবারের ঈদে তা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে।

গত বছর ঈদে এই নৌপথে ১৩টি ফেরি চলাচল করেছিল।

পদ্মাসেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনার পর এ নৌপথে কেবল যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স পার হলেও প্রায় ৭ মাস ধরে ট্রাক ও বাস পারাপার বন্ধ রয়েছে।

ঈদ মৌসুমে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনা, শরিয়তপুর জেলায় যাতায়াত করেন গাড়ি চালক মো. দীন ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার অন্যান্য বারের তুলনায় ফেরির সংখ্যা কম। স্বাভাবিক সময়ে ফেরি পেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। আর শুক্রবার ফেরি পেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। ঈদের আগে যদি ফেরির সংখ্যা না বাড়ানো হয় তবে মানুষের অনেক কষ্ট হবে।'

ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য ঘাট দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস চলাচল করছে। এ নৌপথ দিয়ে যাত্রীবাহী ছোট গাড়ি পার হয়। ঈদ যত এগিয়ে আসবে যাত্রীদের চাপ তত বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে ফেরির সংখ্যা যদি বাড়ানো না হয় তবে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার, শরিয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌপথে দিনের বেলা ৬টি ফেরি চলাচল করে। আর রাতের বেলা চলাচল করে ২টি ফেরি। আর ৩টি ফেরি ডকইয়ার্ডে মেরামতের কাজ শেষে ঈদের আগে আসতে পারে।

তিনি বলেন, 'স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। প্রতিদিন শিমুলিয়াঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, মাঝিকান্দি ফেরিঘাট ৩টিতেই গাড়ি আটকে থাকে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ততই গাড়ির চাপ বাড়বে। ফেরির সংখ্যা বাড়ানো না হলে ভোগান্তি থাকবেই। ঘাটে এসে ফেরি পেতে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা লাগে।'

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসি'র শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে জানান, ঈদ উপলক্ষে এখনো প্রস্তুতি শুরু হয়নি। ঘাটে এখনো গাড়ির চাপ দেখা যায়নি। তবে, ২০ রমজানের পর থেকে গাড়ির চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ফেরি পাওয়ার পর আসা-যাওয়ায় প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

ঈদকে সামনে রেখে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি'র পরিচালক (বাণিজ্যিক) এস এম আশিকুজ্জামান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে ৬টি ফেরি চলাচল করছে। আরও ৪টি মিডিয়াম, রো রো ফেরি যুক্ত হবে বহরে। ঈদ উপলক্ষে ঘাটের প্রস্তুতি নিয়ে সভায় সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

শিমুলিয়া নদীবন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এবং সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহাদাত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদকে সামনে রেখে ৮৬টি যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রস্তুত আছে। এ ছাড়াও, চলাচল করবে ১৫৩টি স্পিডবোট। লঞ্চ ও স্পিডবোট যাতে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রীবহন করে তা নিশ্চিত করা হবে।'

'সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবে সময় বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।'

'শরিয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটে আরও একটি ফেরিঘাট স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে একটি ফেরিঘাট স্থাপন করা আছে। ঈদের আগে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে এ পরিকল্পনা আছে,' যোগ করে তিনি।

তিনি জানান, নিবন্ধনের বাইরে কোনো স্পিডবোট চলাচলের সুযোগ নেই। ঘাট ইজারাদারকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে কোনো নৌযান চলাচল করলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পড়া নিশ্চিত করা হবে। লঞ্চের ভেতর হিটস্ট্রোক পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুমে যাতে নির্দেশনা মেনে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে সে ব্যাপারেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, 'ঢাকাসহ আশেপাশের জেলায় গার্মেন্টসগুলো ধাপে ধাপে ছুটি দিলে ঘাট এলাকায় মানুষের স্বাভাবিক চাপ থাকবে। আর যদি সবাই একসঙ্গে ছুটি দেন তাহলে অনেক চাপ পড়বে।'

শিমুলিয়াঘাটে যাত্রীদের পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুমন দেব। সিরিয়াল মেনেই ঘাটে ফেরির মাধ্যমে গাড়ি পার করা হবে বলে ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।

ভিআইপি পারাপারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঈদে ভিআইপি বলে কোনো কথা নেই। সবাই সাধারণ যাত্রী হিসেবে ফেরি পার হবেন। আলাদা করে কাউকে কোনো সুবিধা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হবে না। এবারের ঈদেও যাত্রীবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ নৌপথে পণ্যবাহী গাড়ির তেমন চাপ নেই।'

এই রুটের যাত্রী সুমন ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবার ঈদ এলেই শিমুলিয়াঘাটে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে ফেরি পেতে ২-৩ ঘণ্টাও লাগে। আর ঈদে ২-৩ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এবার ফেরির সংখ্যা কম। ছোট ফেরি দিয়ে ঘাটের গাড়ি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। বড় ফেরি প্রয়োজন। ফেরির সংখ্যাও বাড়াতে হবে।'

লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া বন্ধে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান জরুরি বলে মনে করেন লঞ্চযাত্রী বাবুল হোসেন।

ঈদকে সামনে রেখে শিমুলিয়াঘাটে জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, পদ্মাসেতু, পুলিশ, নৌপুলিশের সভা হওয়ার কথা আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এ সভা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Preparing for Ramadan's Price Shocks

Power price to go up 4 times a year

The government has drawn up a plan to increase the price of electricity four times a year for the next three years to withdraw all subsidies in the power sector, which the IMF recommends.

1h ago