সংবাদ

ঢাকায় থেকেও ১২ বছর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ‘নিখোঁজ কিশোর’

জুয়া খেলতে গিয়ে ২০১০ সালে নিজের মোবাইল ফোনটি খোয়ান ১৭ বছরের মো. সুমন। বাসায় ফিরে মোবাইল হারানোর কী উত্তর দেবেন সেই দুশ্চিন্তায় তিনি আর ঘরে ফিরেননি। এক যুগ পর তাকে খুঁজে বের করেছে পুলিশ।
সুমন, ১২ বছর আগে ও এখন। ছবি: সংগৃহীত

জুয়া খেলতে গিয়ে ২০১০ সালে নিজের মোবাইল ফোনটি খোয়ান ১৭ বছরের মো. সুমন। বাসায় ফিরে মোবাইল হারানোর কী উত্তর দেবেন সেই দুশ্চিন্তায় তিনি আর ঘরে ফিরেননি। এক যুগ পর তাকে খুঁজে বের করেছে পুলিশ।

সুমন নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং পরে অপহরণের অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও নেয় পুলিশ। যখন এসব ঘটনা ঘটছিল, সুমন তখন ঢাকার শাহবাগে একটি দোকানে চাকরি করছিলেন।

এক পর্যায়ে সুমন বিয়ে করে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় সংসার পাতেন। অন্যদিকে, তখনো তাকে খুঁজছিল পল্লবী থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই।

সুমনের কোনো খোঁজ না পেয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু সুমনকে খোঁজার কাজ অব্যাহত রাখতে আদালতে একের পর এক না-রাজী আবেদন দেয় তার পরিবার।

অবশেষে ঘটনার ১২ বছর পর গতকাল পিবিআই এর পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি দল ঢাকার কদমতলী এলাকায় সুমনের অবস্থান শনাক্ত করে। পিবিআই এর বিশেষ এসপি (ঢাকা মেট্রো উত্তর) জাহাঙ্গীর আলম প্রেস ব্রিফিং করে আজ এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে সুমন মিরপুরে একটি প্যাকেজিং কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট কাজে যাওয়ার পথে মিরপুর-১১ এলাকায় জুয়া খেলে তিনি ১০০ টাকা হারান। সঙ্গে নগদ টাকা না থাকায় জুয়াড়িরা তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন।

বাবার কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে সুমন সেই রাতে বাসায় না ফিরে গুলিস্তানে চলে যান। পরে জুয়াড়িরা মোবাইল ফোনটি যার কাছে বিক্রি করেন তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

বাড়িতে না ফিরে সুমন শাহবাগ এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। পরে তিনি ওই এলাকায় একাধিক দোকানে কাজ নেন। পথের ধারে খাবার বিক্রির কাজও করেন। পরে তিনি একটি হাসপাতালের কর্মী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার কাজ করত এমন একটি বাসে চালকের সহকারীর চাকরি নেন।

বাসে কাজ করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। চার বছর আগে তিনি তাকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিন মাস আগে এক ছেলে শিশুর জন্ম হয়। রায়েরবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ছিল তাদের সংসার।

পিবিআই পরিদর্শক তরিকুল জানান, গত ঈদে সুমন তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সেখান থেকে পুলিশ আবার তার সন্ধান শুরু করে। সুমন তার তার বাবাকে ফোন করে সাগরের ফোন নম্বর জোগাড় করতে তার স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে অনুরোধ করেন। জ্যোৎস্না নিজেকে সুমনের স্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে গত ঈদের দিন তার শ্বশুরকে ফোন করেন।

সুমনের বাবা এই ফোন কলের কথা পিবিআইকে জানান। এর পর অবশেষে সুমনের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

সুমনকে উদ্ধৃত করে পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল বলেন, সুমন বাড়ি ছাড়ার ১১ দিনের মাথায় একবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু, বাসায় ফিরে কী জবাব দেবেন এই ভাবনা থেকেই বাড়ির বাইরে কেটে যায় ১২টি বছর।

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

5h ago