‘গুম’ সংক্রান্ত সরকারি প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করা হচ্ছে

গত ২৮ মে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি সমাবেশে ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের সন্তানরা। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাক এই সমাবেশের আয়োজন করে। ছবি: স্টার

দেশে 'গুমের' ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রশ্নে এই প্রথম সাড়া দিয়েছে সরকার। আমরা সরকারের এ সাড়াদানের প্রশংসা করছি। কিন্তু এই গুরুতর বিষয়ে সরকার প্রতিক্রিয়া জানাতে এত সময় নেওয়ায় আমরা হতাশও বটে।

সরকারের এ ধরনের উদাসীনতা একদিকে যেমন উদ্বেগ বাড়ায়, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তির জন্যও তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জবাবদিহিতার বিষয়ে সরকার কতটা গুরুত্ব দেয়, সে সম্পর্কেও এটি অশুভ বার্তা দেয়।

আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে, ইউএনএইচআরসি ইতোমধ্যেই বলেছে, সরকারের দেওয়া তথ্য অপর্যাপ্ত। সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ৭৬টি 'গুমের' ঘটনার মধ্যে ৬৬টির তথ্য অপর্যাপ্ত বলে জানিয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রশ্নের জবাব তৈরি করতে সরকারের যখন এত সময় লেগেছে এবং 'গুমের' ঘটনায় সরকারকে যখন নিন্দার মুখে পড়তে হয়েছে, তখন সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই উচিত ছিল আরও যত্নের সঙ্গে প্রতিবেদনটি তৈরি করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, 'গুম' সংক্রান্ত বিষয়ে এ ধরনের আচরণ যেন সরকারের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

অভিযোগ আছে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে শত শত মানুষকে 'গুম' করা হয়েছে। প্রতিবারই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো ধরনের দ্বিধা না করে এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। অনেক সময় ভুক্তভোগীদের নিয়ে রসিকতাও করা হয়েছে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই 'গুমের' আগে 'তুলে নেওয়ার' সাক্ষী পর্যন্ত আছে।

বাস্তবতা এমন যে, ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া বা তাদের সাহায্য করার পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বার বার ওই পরিবারগুলোকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির অভিযোগ এসেছে। এমনকি, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ন্যায়বিচার পেতে 'গুমের' ঘটনার অভিযোগ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি, এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে 'গুম' হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে। অনেক পরিবারের সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এতেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে পরিবারের সদস্যদের সামনে কাউকে তুলে নিয়ে গেছেন, নিজের চোখে দেখা এমন ঘটনা ভুলে যেতে তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ওই সব ঘটনার মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করেছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে ভয় পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। পরিবারগুলোর এসব বক্তব্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

এই পুরো পরিস্থিতি কি কম লজ্জাজনক? আমরা মানবাধিকার কর্মী এবং জোরপূর্বক 'গুমের' শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি ইউএনএইচআরসির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। যারা 'গুম' হয়েছেন তাদের খোঁজ বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটি এখন স্পষ্ট যে, শত শত লোক এভাবে নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কোনো শক্তিধর বা ক্ষমতাশালী কিছু কাজ করছে। এ অবস্থায় 'গুম' ব্যক্তিরা নিজেরাই কোথাও 'লুকিয়ে' আছেন, এমন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এভাবে দায় এড়ানোর চর্চা বন্ধ করা দরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

7h ago