লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

কর্ম সংকট, চড়া সুদের ঋণে চলছে বানভাসিদের সংসার

কৃষি শ্রমিক কুলজান বেওয়ার (৬০) বাড়ি গত ৯ জুন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। সেদিন থেকে তিনি কর্মহীন। বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কিন্তু, এখনো মিলছে না কাজের সুযোগ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলাপাড়ে বাঁধেরপাড় গ্রামে কর্মহীন মানুষ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কৃষি শ্রমিক কুলজান বেওয়ার (৬০) বাড়ি গত ৯ জুন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। সেদিন থেকে তিনি কর্মহীন। বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কিন্তু, এখনো মিলছে না কাজের সুযোগ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলাপাড়ে বাঁধেরপাড় এলাকার কুলজান তার স্বামীকে হারিয়েছেন ১০ বছর আগে।

কুলজান বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৫০ টাকা মাসিক সুদে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। সেই টাকায় সংসার চালাচ্ছি। গ্রামে কাজ না থাকায় ঋণ নিয়েছি। কাজ পেলে ঋণ পরিশোধ করবো। তবে খুব কষ্ট হবে।

তিনি বলেন, 'হামারগুলার হাতো এ্যালা টেহাও নাই, কামও নাই। সুদের ওপর টেহা নিছোং।'

কুলজান বেওয়া সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে জানান।

একই গ্রামের হামিদুল ইসলাম (৫৫) ডেইলি স্টারকে জানান, সংসারে স্ত্রী, বৃদ্ধ মা ও ৩ সন্তানকে নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও কোন কাজ যোগাড় করতে পারেনি। গ্রামে কৃষি জমিগুলো এখনো বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।

সরকারিভাবে ১০ কেজি চাল পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'মোর হাতো টেহা নাই। কামও নাই। ১৫০ টাকা মাসিক সুদে ৩ হাজার ধার নিছোং। ধারের টেহা দিয়া সংসার চালবার নাগছোং কোনমতে।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়ার চর এলাকার বানভাসি মোকলেছুর রহমান (৬০) ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যার পানি নেমে গেছে। বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। ঘর মেরামতের টাকা নেই। একদিকে সংসার চালানোর জ্বালা, অন্যদিকে ঘর ঠিক করার যন্ত্রণা। বাধ্য হয়েই গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বলেন, 'বান আংগোরে বিপদ আইন্যা দিছে। হাতে কোন ট্যাকা পয়সাও নাই। গাঁয়ে কোন কামও নাই।'

মোকলেছুরের পরিবারে ৭ জন আছেন। ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন ১০ কেজি চাল ও কিছু শুকনো খাবার।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের বানভাসি মকবুল হোসেন (৬২) ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যার কারণে গত ৭ জুন থেকে গ্রামে কাজ নেই। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে স্থানীয় মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এ্যালা হামরা খাবারে জোটাই নাকি বাড়ি-ঘর ঠিক করি এইল্যা নিয়া হামরাগুলা সমস্যায় পড়ি গেইছি। হামারগুলার বাঁচি থাকা খুব কষ্টের হইছে।'

ওই গ্রামের মহাজন আতেল আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোকজন বিপদে পড়লে টাকা ধার নেন। শতকরা ১০ টাকা লাভে তিনি ঋণ সুবিধা দেন। এজন্য কাউকে কোনো ডকুমেন্ট দিতে হয় না। প্রত্যেক ব্যক্তি ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার নিতে পারেন। গত ২ সপ্তাহে ৬০ বানভাসিকে ধার দিয়েছি।'

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে ৩ লাখের বেশি মানুষ বন্যাদুর্গত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে কুড়িগ্রামে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার এবং লালমনিরহাটে ৭০ হাজার মানুষ রয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Lightning strikes claim 7 lives in 4 districts

At least seven people died and nine others were injured in lightning strikes in Rangamati, Sylhet, Khagrachhari, and Cox’s Bazar districts today

26m ago