নারী শিক্ষার্থীদের রক্ষা করবেন নাকি অপরাধীদের?

চবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বুধবার থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা জানাই।

এটি দুঃখজনক যে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই যৌন সহিংসতার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো- অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং ক্যাম্পাসে নারী বিদ্বেষ ও ধর্ষণ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে প্রশাসনের উদ্যোগের সুস্পষ্ট অভাব।

প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী পুলিশের কাছে মামলা করার আগে প্রক্টরিয়াল বডিতে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে নারী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে চবি কর্তৃপক্ষ নারী শিক্ষার্থীদের 'এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে' রাত ১০টার মধ্যে হলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি ১৭ জুলাই ঘটে। সেদিন ৫ জনের একটি দল ওই নারী শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুকে হতাশার মোড় থেকে জোরপূর্বক তুলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যায়, মারধর করে এবং নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করে।

ওই শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীরা প্রথম দিন থেকে দাবি করে আসছিলেন যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সদস্যরা এই হামলায় জড়িত ছিল। পুলিশ এবং চবি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে দ্য ডেইলি স্টার এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসে ১৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার পরেও কেন পুলিশ ও প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকভাবে এটি জানাতে এত সময় লাগছে?

আমরা কি বিশ্বাস করবো যে সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না নাকি তারা কেবলই অনিচ্ছুক?

ঘটনার প্রতি প্রশাসনের নিষ্প্রভ প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থী ও জাতির কাছে একটি অস্বস্তিকর বার্তা পাঠাচ্ছে। সেটি হলো- যাদের ওপর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে তারা সেই দায়িত্ব পালন না করে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে অপরাধীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশি আগ্রহী।

দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রশাসন রাজনৈতিক ক্যাডারদের রক্ষা করে আসছে এবং এই প্রক্রিয়ায় কয়েক দশক ধরে কোনো বিচার ছাড়াই যৌন সহিংসতার মতো ঘটনায় তাদের অংশ নেওয়ার সাহস জুগিয়েছে।

এভাবে তারাই নারী বিদ্বেষে ইন্ধন জুগিয়েছে, নারী শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য অনিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করেছে।

তারা ধারাবাহিকভাবে নারীদের ওপরই দোষ চাপিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে 'খারাপ মেয়ে', 'ভুল সময়ে' বা 'ভুল পোশাক' পরে বের হওয়ার মতো কথা বলে ভিক্টিম ব্লেমিং করে এসেছে।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি' কার্যকর করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্যাম্পাসে সেগুলো অনুপস্থিত বা শুধু নামেই রয়ে গেছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত থাকলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রায়শই প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে। তবে এটি ৪ বছরে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের সমাধান করেনি। এই পরিসংখ্যান আমাদের কমিটির কার্যকারিতা বা কার্যকারিতার অভাব সম্পর্কে ধারণা দেয়। 

আমরা প্রশাসনকে একটি নিরাপদ ও সংবেদনশীল ক্যাম্পাসের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি আমলে নেওয়ার অনুরোধ করছি।

আমরা ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাই। হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার এবং কমিটি যেন যৌন সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কার্যকর হয় সেটি নিশ্চিত করার সময় এসেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Rice_market

Development is not just about macroeconomic progress

Do macroeconomic concepts reflect the realities on the ground?

13h ago