৯ বছর ও ১৯ ম্যাচ পর বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে হারাল জিম্বাবুয়ে

ছবি: টুইটার

৬২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধলেন সিকান্দার রাজা ও ইনোসেন্ট কাইয়া। চাপ সামলে চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করলেন ১৭২ বলে ১৯২ রান। এই রেকর্ড জুটি গড়ার পথে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন দুজনেই। কাইয়া আউট হলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া রাজা মাঠে থাকলেন শেষ পর্যন্ত। তাদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।

হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতেছে জিম্বাবুয়ে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, লিটন দাস, এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৩ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১০ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান তুলে লক্ষ্যে পৌঁছায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ১৯ ওয়ানডে হারার পর তারা জয়ের স্বাদ নিল। তাদের আগের জয়টি ছিল নয় বছর আগে, ২০১৩ সালের মে মাসে বুলাওয়েতে। পাশাপাশি টাইগারদের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া।

তিনে নেমে কাইয়া ১১০ রান করেন ১২২ বলে। তিনি মারেন ১১ চার ও ২ ছক্কা। পাঁচে নামা রাজা অপরাজিত থাকেন ১৩৫ রানে। ১০৯ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসে তিনি হাঁকান ৮ চার ও ৬ ছক্কা। মাহমুদউল্লাহর বলে ছক্কা মেরে খেলা শেষ করেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন কাইয়া ও রাজা। আগের কীর্তি ছিল অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের দখলে। ১৯৯৭ সালে নাইরোবিতে তারা গড়েছিলেন ১৬১ রানের জুটি।

বাংলাদেশের ডানহাতি পেসার তাসকিনের করা ৩৯তম ওভারে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কাইয়া ও রাজা দুজনেই। ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কের মাইলফলক স্পর্শ করেন কাইয়া। মুখোমুখি হওয়া ১১৫তম বলেন শতরান পূরণ হয় তার। ওই ওভারের শেষ বলে রাজা পান এই সংস্করণে চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তিন অঙ্ক ছুঁতে তার লাগে মোটে ৮১ বল। সাত বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পান রাজা। এই সংস্করণে তার সবশেষ সেঞ্চুরিটি ছিল ২০১৫ সালের অগাস্টে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

উইকেটে যাওয়ার পর থেকে বাহারি সব শটে বাংলাদেশের বোলারদের ব্যতিব্যস্ত রাখেন রাজা। রেকর্ড জুটিতে তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। কাইয়াও হাফসেঞ্চুরির পর ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করেন। দুজনই অবশ্য একবার করে জীবন পান। ২৭তম ওভারে রাজাকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে শর্ট কভারে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম। তখন রাজার রান ছিল ৪৩। এরপর ৩৩তম ওভারে কাইয়ার দেওয়া ফিরতি ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। উল্টো বল পায়ে লাগায় ব্যথা পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। তখন কাইয়া ব্যাট করছিলেন ৭৪ রানে। অল্প সময়ের ব্যবধানে মাঠে ফিরলেও পরে আবার বেরিয়ে যান শরিফুল।

বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্রস ব্যাটে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইনসাইড এজ হয়ে বল মাটিতে একবার ড্রপ খেয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ৬ বল খেলা চাকাভার রান ২।

শরিফুলের প্রথম বলেই স্কয়ার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান আরেক ওপেনার তারিসাই মুসাকান্দা। তিন বল পরই শোধ তোলেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার। তবে সেখানে মুসাকান্দার দায়ই বেশি। নির্বিষ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে সহজ ক্যাচ দেন তিনি। ৫ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি।

দুই ওপেনার নির্বিষ বলে উইকেট হারানোর পর কাইয়া ও ওয়েসলি মাধেভেরের ব্যাটে চাপ সরাতে থাকে জিম্বাবুয়ে। তাদের জুটিও জমে গিয়েছিল। কিন্তু ১৪তম ওভারে গড়বড় হয়ে যায়। মিড উইকেটে প্রথম চেষ্টায় বল আটকাতে ব্যর্থ হন তাইজুল। সেই সুযোগে সিঙ্গেলকে ডাবলে রূপান্তর করতে মনস্থির করেন দুই ব্যাটার। কিন্তু সামলে নিয়ে তাইজুল দ্রুত থ্রো করেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে। ক্রিজের মাঝে চলে যাওয়া মাধেভেরে ফেরার আগেই উইকেট ভেঙে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। 

বিশাল জুটির পর কাইয়া আউট হন ৪২তম ওভারে। মোসাদ্দেকের বলে স্লগ করতে গিয়ে শরিফুলের তালুবন্দি হন তিনি। তবে এই ব্রেক থ্রুকে অসাধারণ কিছুতে রূপান্তর করতে পারেনি বাংলাদেশ। লুক জঙ্গুয়ে উইকেটে গিয়ে খেলেন ১৯ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস। মিরাজ যতক্ষণে তাকে বিদায় করেন, ততক্ষণে লক্ষ্য ছিল জিম্বাবুয়ের হাতের নাগালে।

ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে ফেরানোর সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে পারেনি তামিম ইকবালের দল। ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেটে কোনো টাইগার বোলারই পারেননি নিজেদের মেলে ধরতে। মোস্তাফিজ ৯ ওভারে দেন ৫৭ রান। একইসংখ্যক রান শরিফুল খরচ করেন ৮.৪ ওভারে। উইকেটশূন্য তাসকিনের ১০ ওভারে প্রতিপক্ষ তোলে ৫২ রান। ওভারের কোটা পূরণ করেন মিরাজও। তিনি দেন ৫৯ রান। মোসাদ্দেক ৬৭ রান খরচ করেন ৯.২ ওভারে। 

এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন অধিনায়ক তামিম। আরেক ওপেনার লিটন দাসের সঙ্গে তার ১১৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় টাইগাররা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তোলে ২ উইকেটে ৩০৩ রান।

৮৮ বলে ৬২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। আহত অবসরে যাওয়া লিটন মাঠ ছাড়েন ৮৯ বলে ৮১ রানে। তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে এনামুল হক বিজয় খেলেন ৬২ বলে ৭৩ রানের আগ্রাসী ইনিংস। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৫২ রানে। আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষদিকে নেমে ১২ বলে অপরাজিত ২০ রান করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Workers, parties oppose handover of Ctg container terminal to foreign operator

Constructed at a cost of Tk 2,000 crore, the terminal was completed by the Chittagong Port Authority in 2007

6m ago