আনারসে ‘বিষ’, যা বলছেন কৃষক

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আনারস খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। তবে, এই আনারস বিষাক্ত হয়ে উঠছে রাসায়নিকে। কৃষক আনারস বড় করতে এবং সময়ের আগে পাকাতে ব্যবহার করছেন অতিরিক্ত হরমোন।
মধুপুরে ক্রেতার অপেক্ষায় আনারস চাষিরা। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আনারস খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। তবে, এই আনারস বিষাক্ত হয়ে উঠছে রাসায়নিকে। কৃষক আনারস বড় করতে এবং সময়ের আগে পাকাতে ব্যবহার করছেন অতিরিক্ত হরমোন।

রাসায়নিক ব্যবহার করায় আনারস চাষিরা তিরস্কৃত হলেও এ বিষয়ে তারা বলছেন ভিন্ন কথা।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বেশ কয়েকজন আনারস চাষির সঙ্গে। তাদের দাবি, রাসায়নিক ব্যবহার করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প থাকে না। কেননা, পাইকাররা প্রাকৃতিকভাবে পাকা আনারস কিনতে চান না।

প্রাকৃতিকভাবে পাকা আনারস দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই সেগুলোতে পচন ধরতে শুরু করে। তবে, রাসায়নিক প্রয়োগ করা ফল বেশ কয়েকদিন ভালো থাকে। ফলে, পাইকারদের চাপেই আনারসে রাসায়নিক দেন বলে দাবি করেন কৃষক।

আনারসের খেতে রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন এক কৃষক। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

মধুপুরের বেরিবাইদের চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'পাইকাররা যদি প্রাকৃতিকভাবে পাকা আনারস কিনতে না চায় তাহলে আমরা কী করতে পারি?'

তিনি আরও বলেন, 'প্রাকৃতিকভাবে পাকা আনারসের কোনো ক্রেতা খুঁজে পাই না। সেই কারণে ভালো দাম পেতে নিরুপায় হয়েই আমরা রাসায়নিক ব্যবহার করতে বাধ্য হই।'

মধুপুরের আউশনারার চাষি শামসুল ইসলাম বলেন, 'আমি তো রাসায়নিক দিতে চাই না। প্রাকৃতিকভাবে পাকা আনারস কেনার মানুষ পেলে আমি নিজেই আর রাসায়নিক ব্যবহার করব না।'

মধুপুরের মোটর বাজারের আনারস চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, 'সঠিক বিপণন সুবিধার অভাবে আমাদের লোকসান হয়। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের বড় অংশটাই খেয়ে ফেলে। আমি ক্ষেত থেকে যে আনারস ৩০ টাকায় বিক্রি করি, সেটা শহরে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মধুপুরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। যেন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আনারস ও অন্যান্য ফল প্রক্রিয়াজাত করা যায় সহজে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছু হয়নি।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, 'সরকার উদ্যোগ নিলে আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আনারস বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো। ইতোমধ্যেই মধুপুরে খাদ্য (ফল) প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।'

উল্লেখ্য, মধুপুর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা।

বিক্রির জন্য স্থানীয় হাটে আনারস নিয়ে এসেছেন এক কৃষক। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

স্থানীয় চিকিত্সক ডা. আনোয়ার সাদাত বলেন, 'এই রাসায়নিকগুলো সারা বিশ্বেই ফলের ওপর ব্যবহার করা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট মাত্র আছে। সেই মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়ে এটি স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকারক নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে স্থানীয় কৃষক এই রাসায়নিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করেন, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।'

মধুপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫ একর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৭২৯ একর বেশি।

এ ছাড়া, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া এবং গড় অঞ্চলের জামালপুর সদর উপজেলায় ৭ হাজার একরের বেশি জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে।

আনারসের হাট। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

আনারস ছাড়াও মধুপুর এবং পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল ও সখীপুরে আম, কলা, কমলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ বেশ কিছু ফল ও সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।

ফল উৎপাদনে রাসায়নিকের অতি ব্যবহারে এসব এলাকায় রাসায়নিক ও কীটনাশক বিক্রির কয়েকশ দোকান গড়ে উঠেছে।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছান খুব কমই। তাই কৃষকরা এই রাসায়নিক ও কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছ থেকেই উচ্চ ফলন ও ভালো রঙের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মাত্রাতেই ব্যবহার করেন রাসায়নিক।

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.59 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.59 crore, which is 1,619 times the contract value.

3h ago