দুই দফায় সফল সাকিব, এক মাঠে ‘অনেক মিরাজ’

Shakib Al Hasan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচও একে বলা চলে না বোধহয়। 'ম্যাচ সিনারিও অনুশীলন' বললেই বেশি জুতসই লাগে। প্রথমবার না পেরে দ্বিতীয়বার ব্যাট করলেন কেউ কেউ। একজন ব্যাট করলেন দু'দলের হয়েই। ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ক্রিজে এসে তার মতই করেই সাজিয়ে নিলেন ফিল্ডিং। এশিয়া কাপের জন্য প্রস্তুতির প্রথম মঞ্চটা সাজানো থাকল টুকরো টুকরো গল্পে। 

ব্যাটসম্যান সাজালেন ফিল্ডিং

ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে প্রতিপক্ষের ফিল্ডিং সাজিয়ে দিচ্ছেন। এমন দৃশ্য যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই অবাস্তব। কিন্তু প্রস্তুতির মঞ্চ তো আলাদা। সেখানে সবই বাস্তব। লাল দলের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করতে এসে সেটাই করলেন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। খেলাটা বাকিদের থেকে তিনিই বেশি বোঝেন। নিজেরদের কাজটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ বানিয়ে সেখানে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন তিনি।

Afif Hossain

দুই দফায় ব্যাট করলেন তারা

লাল দলের হয়ে ওপেন করতে নেমে ৪ রান করেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। ৩ উইকেট পড়ার পর আবার ব্যাট হাতে মাঠে ঢুকতে দেখা গেল তাকে। প্রথম দফায় তড়িঘড়ি আউট হয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত ম্যাচ অনুশীলনের জন্যই অনুমিতভাবে দ্বিতীয় সুযোগ। সেই সুযোগও খুব বেশি কাজে লাগেনি বিজয়ের।

দ্বিতীয় দফায় নেমে প্রথম বলেই ছক্কা পেটালেন তিনি, পরে মারলেন আরেকটি। তবে এবারও থামলেন দ্রুত। ১০ বলে ১৯ রান করে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় মেহেদী হাসান মিরাজের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিউ।

চারে নেমে তার মতই প্রথম দফায় ব্যর্থ ছিলেন সাকিব। ১৩ বলে ১৭ করে ইবাদতের হোসেনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। পরে সাকিব নামলেন আবার একদম স্লগ ওভারে। সেই সময়টা বেশ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ২৪ বলে তিন ছক্কায় করেছেন ৩৬ রান।

এক ইনিংসে দুবার ব্যাট করেছেন আরেকজন। সবুজ দলের অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব রান তাড়ায় তিনে নেমে বিস্তর ভুগেছেন। ১৫ বল খুইয়ে ৮ রান করে আউট হন তিনি। পরে ছয় নম্বরে নেমে ২ বলে ১ রান করে হন রানআউট। প্রস্তুতিটা একদম হয়নি আফিফের।

ফিনিশিংয়ে দশে দশ মোসাদ্দেক

সাকিবকে এক পাশে রেখে তাকে ছাপিয়ে গেলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। স্লগ ওভারে আগ্রাসী ব্যাট করার চাহিদাটা মিটিয়েছেন তিনিই। ১৭ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় তিনি করেছেন ৩০। তার ব্যাটেই ১৬৫ পর্যন্ত যেতে পারে লাল দল।

লাল দলে ব্যর্থ, সবুজ দলে বিস্ফোরক শেখ মেহেদি

শেখ মেহেদি হাসানও দুইবার ব্যাট করেছেন। তবে এক ইনিংসে নয়। দুই দলের হয়েই তাকে নামতে দেখা গেছে। সাকিবের দলের হয়ে তিনে নেমে কোন রান করতে পারেননি।

সবুজ দলের হয়ে ৭ নম্বরে নেমে তিনি হয়ে উঠেন বিস্ফোরক। মাত্র ১৬ বলে ৭ চারে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন মেহেদি।

মিরাজের জার্সি পরে আছেন মুশফিক। ছবি- ফিরোজ আহমেদ/ স্টার

এক মাঠে অনেক 'মিরাজ'

মেহেদি হাসান মিরাজ বল করছেন, ফিল্ডিং করছেন আবার একই সময়ে ব্যাটও করছেন! এও হয় নাকি। কেউ জার্সির পেছনের নাম-নম্বর দেখে সিদ্ধান্তে এসে গেলে তার কাছে এমন ঠেকতে পারে। আসলে মিরাজের জার্সি পরে খেলেছেন বেশ কয়েকজন। শেখ মেহেদীকে একটা সময় মিরাজের ৫৩ নম্বর জার্সি পরে নামতে দেখা গেছে। মুশফিকুর রহিম ব্যাট করেছেন মিরাজের জার্সি পরে। মিরাজ নিজে তো তার জার্সি পরেছেনই। মূলত লাল দল, সবুজ দল ভাগ করতে গিয়ে হয়েছে এমন জার্সি বিভ্রাট। মিরাজ তার লাল জার্সি নিয়ে এসেছিলেন বেশ কয়েকটি। দুই দলকে আলাদা করতে একে অন্যের জার্সি পরে নেমেছিলেন।

Mahmudullah & Mushfiqur Rahim
ছবি: স্টার

মাহমুদউল্লাহ এক ছক্কার পরই অক্কা, মুশফিক সুইপে কাবু

লাল দলের হয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেমেছিলেন সাত নম্বরে। খারাপ সময় পার করা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। সেই সংশয় দূর করার আভাস আপাতত মিলল না। সাত নম্বরে নেমে বিশাল এক ছক্কা মারলেও তিনি করতে পারেন ৯ বলে ১২ রান। যুব দলের তরুণ পেসার আশিকের বলে পুল করতে গিয়ে ধরা দেন ফাইন লেগে।

মুশফিক খেলছিলেন ভালোই। দেখে মনে হচ্ছিল সাবলীল। থিতু হয়েও তিনি কাবু নাসুম আহমেদের বলে। সুইপ করার চেষ্টায় বল টপ এজড হয়ে যায়। বাউন্ডারি লাইনে তার সহজ ক্যাচ লুফেন তানজিদ তামিম।

পারভেজের ডট বলের চাপ

বাঁহাতি তরুণ পারভেজ হোসেন ইমনকে খেলানো নিয়ে হয়ত কিছু সংশয় তৈরি হয়ে যাবে এখনি। এশিয়া কাপের স্কোয়াডে স্বীকৃত দুই ওপেনারের একজন তিনি। লাল দলের হয়ে বিজয়ের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন। অনেকটা সময় ক্রিজে থেকেও চাহিদা মেটানো ব্যাট করতে পারেননি তিনি। ২১ বলে এই বাঁহাতি করতে পারেন ২১ রান। তাকে দিয়ে পাওয়ার প্লের চাহিদা কতটা মিটবে এই প্রশ্ন উঠতে পারে।

খরুচে তাসকিনে হতাশা

তাসকিন আহমেদের কি হলো? জিম্বাবুয়ে সফরে বেশ খরুচে বল করেছিলেন। এদিন প্রস্তুতি ম্যাচেও তাকে দেখা গেল তেমনই। ২ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে বিলিয়েছেন ৪৯ রান।

জুতসই বল করেছেন ইবাদত হোসেন। ৪ ওভারে স্রেফ ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২ ওভারে দেন কেবল ১৩ রান।

মোস্তাফিজুর রহমান এই ম্যাচ খেলেননি। চোটে পড়া হাসান মাহমুদও ছিলেন না। স্পিনারদের মধ্যে ভাল বল করেছেন নাসুম আহমেদ। ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে তিনি নেন ২ উইকেট। সাকিব ২ উইকেট নেন ২৯ রানে। মিরাজ ৩ ওভারে দিয়েছেন স্রেফ ১৭ রান। শেখ মেহেদীর ২ ওভার থেকে ব্যাটাররা ১৫ রানের বেশি নিতে পারেননি।

কম রান করেও জয়ী সবুজ দল 

রোববার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খেলা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে লাল দল করল ১৬৬ রান, সবুজ দল থামল  ১৫০ রানে। ম্যাচের ফলের মূলত গুরুত্ব নেই এখানে। তবে মজার ব্যাপার হলেও ১৫ রান কম করেও ৪ উইকেটে জিতেছে সবুজ দল। কারণ লাল দলের অধিনায়ক সবুজ দলের অবস্থা থেকে লক্ষ্য কমিয়ে দিয়েছিলেন ১৪৮ রানে। শেখ মেহেদী শেষ বলে ছক্কা মেরে সেই সমীকরণ মিলিয়ে দেন।  সোমবার একইভাবে আরেক ম্যাচ খেলবেন সাকিবরা।

sridharan sriram
যোগ দিলেন নতুন কোচ শ্রীধরণ শ্রীরাম। ছবি- ফিরোজ আহমেদ/স্টার

ম্যাচ শেষে সব মনযোগের কেন্দ্রে শ্রীধরণ শ্রীরাম 

খেলা শেষ হতেই মাঠে প্রবেশ করলেন টি-টোয়েন্টি দলের নতুন পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম। তার সঙ্গে আলাপ করলেন সাকিব আল হাসান, পরিচিত হলেন অন্য খেলোয়াড়রা। পরে কোচিং স্টাফের বাকিদের সঙ্গে আড্ডা জমালেন তিনি। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো এদিন মাঠেই আসেননি প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গে তিনি যে থাকছেন না সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছে তাতে। শ্রীরাম মাঠের আনুষ্ঠানিকতা সেরে গণমাধ্যমে এড়িয়ে সোজা হোটেলের পথ ধরলেন। সোমবার তার বিসিবি সভাপতির সঙ্গে সভায় বসার কথা। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh races to expand air cargo capacity

In a first move to address the shortfall, Sylhet's Osmani International Airport is set to launch dedicated cargo operations today

10h ago