টু ডু লিস্টের ৮ মূলমন্ত্র
প্রতিদিন চলার পথে ছোটখাটো অনেক কাজই করতে হয়। অনেকে সেসব কাজ নির্ভুলভাবে করার জন্য দিনের শুরুতে বা আগের দিন রাতে অনেকেই একটি টু ডু লিস্ট তৈরি করেন। কিন্তু সেসব তালিকা তৈরির সময় কিছু ভুল থেকে যায়, যেজন্য মূল উদ্দেশ্যে ভাটা পড়ে। এই লেখায় সেসব ভুল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১. লিখে রাখতে হবে
অনেকেই নিজের স্মৃতির উপর পূর্ণ আস্থা রেখে মাথার ভেতর এসব তালিকা করেন। কিন্তু কিছু না কিছু বাদ পড়েই যায়। নিজের কাজের জায়গায় বা বিছানার উপরে দেয়ালে একটি স্টিকি নোটে যদি টু ডু লিস্ট লিখে রাখা হয়, তাহলে তা বারবার চোখে পড়ে এবং বেশি কার্যকর হয়। ভুলে যাবার সুযোগও থাকে না। কিছু বাদ পড়ে থাকলেও সেটা যোগ করে নেওয়া যায়।
আজকাল ফোনেও বিভিন্ন অ্যাপ মেলে, সেগুলোও ব্যবহার করা যায়। আর লিখে রাখার ফলে কাজগুলো আরও বেশি বাস্তব আর কাজের সময়গুলোও অনেক গোছানো মনে হয়। লিখিত টু ডু লিস্ট থেকে পালানোও বেশ কঠিন বটে। তাই সমাজবিজ্ঞানী ও ম্যানেজমেন্ট কোচ জ্যান ইয়াগার বলেন, 'লিখে রাখার মাধ্যমে কাজগুলোর প্রতি দায়বদ্ধতা জন্মায়। অপরিকল্পিত বা বহুমাত্রিক কাজে লেগে পড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কারণ আপনার চোখের সামনেই আছে সারা দিনের একটি পরিকল্পনা।'
২. টু ডু লিস্ট আর উইশ লিস্ট এক নয়
এমন কোনো কাজ, যা আপনার করার ইচ্ছে আছে, কিন্তু আজ নাও করতে পারেন– এমন কাজ এই তালিকায় না রাখাই ভালো। সেসব কাজের জন্য অন্য তালিকা তৈরি করুন। প্রতিদিনকার টু ডু লিস্টে এমন কাজই থাকুক, যেগুলো সেদিনই করা জরুরি বা করা হবে। এক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে স্বচ্ছতা রাখতে হবে।
ইয়াগারের মতে, 'টু ডু লিস্ট আপনাকে আরও প্রোডাকটিভ করার জন্য তৈরি করা হবে; আপনি কী করতে চান, তার উপর ভিত্তি করে নয়।'
৩. অনেক বেশি কাজ নয়
টু ডু লিস্ট অহেতুকভাবে দীর্ঘ করা চলবে না। কাজের প্রাধান্য অনুযায়ী ঠিক করতে হবে। লেখক লরা ভ্যান্ডারকাম বলেন, 'টু ডু লিস্টে জগতে আপনার করার মতো সব কাজ যোগ করার দরকার নেই। এতে শুধু আজকে করতে হবে, এমন ৩-৫টি জরুরি কাজ থাকবে। এর থেকে বেশিও দরকার হতে পারে, কিন্তু আদর্শিকভাবে টু ডু লিস্ট আসলে আপনার নিজের সঙ্গে নিজের চুক্তি। এখানে লেখা কাজগুলো আপনাকে যেকোনোভাবেই হোক সম্পন্ন করতে হবে।'
৪. বড় কাজকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করা
টু ডু লিস্টে একটি কাজ বলতে একটি আইটেমকে বোঝায়। কিন্তু আমাদের এমন অনেক কাজ থাকে, যা বিভিন্ন ধাপে ভাগ করা। সেগুলোকেও যদি ছোট কাজের সঙ্গে একই পাল্লায় টু ডু লিস্টে যোগ করা হয়, তাহলে একটা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
লেখক গ্রেস মার্শালের মতে, তখন আমরা ছোট কাজগুলো আগে করে ফেলার প্রবণতা দেখাই, কেননা এতে করে আমাদের আত্মতুষ্টি মেলে। অপরদিকে বড় কাজগুলো সবসময় তালিকার তলানিতে পড়ে থাকে। কিন্তু সেই বড় কাজগুলোকে ধাপে ধাপে ভাগ করলে আর এই সমস্যাটা দেখা দেয় না।
৫. এলোমেলো হওয়া যাবে না
মূলত অগোছালো জীবনযাপনকে একটু কাঠামোবদ্ধ করার জন্যই এই টু ডু লিস্টের ধারণা। তাই এই কাজটি একেবারেই এলোমেলোভাবে করা যাবে না। তালিকার প্রতিটি কাজ সম্পর্কে গোছানো ধারণা থাকতে হবে। দিনের বিভিন্ন সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিতে পারলে আরও ভালো হয়। প্রোডাকটিভিটিস্ট ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মাইক ভার্ডি টু ডু লিস্ট এমনভাবে তৈরি করতে পরামর্শ দেন যাতে মনে হয়, অন্য কাউকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এই 'অন্য কেউ' হচ্ছে আপনার ভবিষ্যত সত্ত্বা।
৬. ইনবক্সে টু ডু লিস্ট নয়
অনেকেই ইমেইল বা বিভিন্ন অ্যাপের ইনবক্সে টু ডু লিস্ট লিখে রাখেন, কিন্তু এটি খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। এতে বরং বারবার সেসব মেইল বা ইনবক্স চেক করতে গিয়ে কিছুটা সময় আরও অপচয় হয়। এক্ষেত্রে কাগজ বা টু ডু লিস্টের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করাই শ্রেয়।
৭. বিরতি নেওয়ার অভ্যেস
কাজের রুটিনের মধ্যে বিরতির সময়গুলোও রাখতে হবে, যাতে করে মানসিক বিরতি নেওয়া যায়। এতে কাজের শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। হতে পারে তা ৫ মিনিটের জন্য হেঁটে আসা, গান শোনা ইত্যাদি। পরিবেশগত মনোবিজ্ঞানী লি চ্যাম্বারস বলেন, 'টু ডু লিস্টের কাজগুলোতে টিকচিহ্ন দেওয়ার মতোই জরুরি এই বিরতি নেওয়া। তাই বিরতির বিষয়টাও টু ডু লিস্টে যোগ করে নেওয়া ভালো। আপাতদৃষ্টিতে প্রোডাকটিভ নয় এমন কাজকে প্রায়ই অযথা মনে করা হয়, কিন্তু আগের কাজগুলোর রেশ থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত করতে একটি ছোট্ট বিরতি খুবই দরকার।'
৮. নিয়মিত কাজগুলোকে তালিকায় রাখার দরকার নেই
অনেকে টু ডু লিস্ট দীর্ঘ করতে এবং কাজ সম্পন্ন করার আত্মতুষ্টি পেতে এমন সব কাজ এ তালিকায় যোগ করেন, যার আদতে কোনো প্রয়োজন নেই– যেমন, ব্রাশ করা, স্নান করা, খাওয়া ইত্যাদি। এতে করে মনে হতে পারে যে অনেক কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য জরুরি কাজগুলো যে করা হয়নি– সেটা নজর এড়িয়ে যাবে এত টিকচিহ্নের কারণে। যে কাজগুলো করা দরকার ছিল, সেগুলোও দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যাবে এমন ছলচাতুরিতে। যদি কেউ সত্যিই প্রোডাকটিভ হতে চায়, তাহলে টু ডু লিস্টে নিজের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করার কোনো সুযোগ না রাখাই ভালো।
গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী
তথ্যসূত্র
দ্য হাফিংটন পোস্ট
Comments