দেশে ৬৩.৫১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার শিকার: অ্যাকশনএইডের সমীক্ষা

এক সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী উত্তরদাতারা বলেছেন তারা অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত বছর এর হার ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশে অনলাইন সহিংসতা নিয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা: বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত

এক সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী উত্তরদাতারা বলেছেন তারা অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত বছর এর হার ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশে অনলাইন সহিংসতা নিয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আজ রোববার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা: বাধা এবং উত্তরণের উপায়' শীর্ষক আলোচনা সভায় সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ৩৫৯ জন নারী সমীক্ষায় অংশ নেন। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী এই নারীদের মধ্যে অনলাইনে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়।

সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২২ সালে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নারীরা বেশিরভাগই ফেসবুকে (৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ), ম্যাসেঞ্জারে (৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ), ইনস্টাগ্রামে (৬ দশমিক ১১ শতাংশ), ইমোতে (৩ দশমিক ০৬ শতাংশ), হোয়াটসঅ্যাপে (১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) এবং ইউটিউবে (১ দশমিক ৩১ শতাংশ) অনলাইন সহিংসতার সম্মুখীন হয়। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী বলেছেন তারা ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএস এর মাধ্যমে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।

এ বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য এবং আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি গ্রহণ এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব, ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতারা বলেছেন যে তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি তৈরির ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন, ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বলেছেন যে তাদের কার্যকলাপ সবসময় সাইবার স্পেসে অনুসরণ করা হয় এবং ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন, ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বলেছেন তাদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন।

৩ দশমিক ০৬ শতাংশ উত্তরদাতাদের মতে, যৌন নিপীড়নের সময় তাদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছিল। ২ দশমিক ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপনে পোস্ট করা হয় এবং পরে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়ে অর্থের জন্য ব্ল্যাকমেইল করা হয়। ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের ছবি সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়।

সমীক্ষা মতে, অনলাইন সহিংসতার কারণে নারীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব হলো মানসিক আঘাত, হতাশা এবং উদ্বেগ (৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাব হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আস্থা হারানো (৪২ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন। সমীক্ষায় আরও প্রকাশ করা হয়েছে যে অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করছে।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ৮৫ শতাংশ এরও বেশি ভুক্তভোগী কোন অভিযোগ জমা না দিয়ে নীরব ছিলেন যদিও তারা বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে, ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিং এর মাধ্যমে, ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ জাতীয় জরুরি পরিষেবা (৯৯৯) এর মাধ্যমে, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ নিকটস্থ থানায়, ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপি এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সমীক্ষায় আরও প্রকাশ করা হয় যে বেশিরভাগ নারী মনে করেন বিদ্যমান অভিযোগের প্রক্রিয়াগুলি কার্যকর নয়। তাই, তারা কোনো অভিযোগ (২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ) জমা দিতে আগ্রহ দেখাননি । ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ উত্তরদাতারা তাদের জমা দেওয়া অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার বা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখেননি। সামাজিক কলঙ্ক, ভুক্তভোগী দোষারোপ এবং গোপনীয়তা হারানোর ভয়ে ৭৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী অনলাইনের মাধ্যমে বেনামে অভিযোগ করতে চান।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, 'নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন কিছু নয় এবং এটি এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে বিদ্যমান রয়েছে। পরিবার, সামজ, রাষ্ট্র- প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন হচ্ছে এবং এর নানা রকম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। এর নতুন এক মাধ্যম  হলো অনলাইন, এই প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কিশোরী ও ১৮ বছরের নিচের কন্যা শিশুরা এর শিকার বেশি হচ্ছে । সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব'।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

21h ago