দেশে ঢেউটিনের বাজার ১৫ হাজার কোটি টাকার

ঢেউটিন
খুলনার বড়বাজার স্টেশন রোডে ঢেউটিনের দোকান। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

রঙিন ও টেকসই ঢেউটিন সহজে পাওয়া যাচ্ছে বলে দেশে এর বাজার প্রসারিত হচ্ছে।

রঙিন ঢেউটিনগুলোয় বাড়তি প্রলেপ বা প্রতিরক্ষামূলক আবরণ থাকায় ঘরবাড়ি, কারখানা ও অন্যান্য কাঠামোর ছাদ বা আচ্ছাদন হিসেবে এগুলোর ব্যবহার বাড়ছে।

সে হিসেবে দেশে ঢেউটিনের বার্ষিক চাহিদা এখন ১২ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজার।

তবে বর্তমানে দেশে মাত্র ৫ প্রতিষ্ঠান ঢেউটিন তৈরি করছে। এর সবগুলোই চট্টগ্রামে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—পিএইচপি ফ্যামিলি, কেডিএস গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবুল খায়ের ও পিএইচপি যৌথভাবে বাজারের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মতে, বাজারে কেডিএসের ঢেউটিনের চাহিদা প্রায় ১৫ শতাংশ এবং টিকে গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের ঢেউটিনের চাহিদা ৫ শতাংশ করে।

পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একসময় দেশে শুধু সাধারণ ঢেউটিন পাওয়া গেলেও এখন ক্রেতারা নানান ধরনের ঢেউটিন পাচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'গ্যালভালুম দিয়ে তৈরি আমাদের ঢেউটিনগুলো ন্যায্য দামে বিক্রি করি। এতে জিংক, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলিকনের আবরণ থাকে। এগুলো টিনে মরিচা পড়া রোধ করে।'

আমির হোসেন জানান, তারা বাড়িঘর ও কারখানার ছাদে ব্যবহারের জন্য রঙিন ঢেউটিন তৈরি করছেন।

বর্তমানে, পিএইচপি প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন ঢেউটিন উৎপাদন করে। এটি দেশের ঢেউটিনের মোট বাজারের প্রায় ৪৫ শতাংশ।

দেশে ঢেউটিন প্রস্ততকারকের সংখ্যা এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারখানা করতে কমপক্ষে ১২ শ কোটি টাকা দরকার হয়।'

টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর অব অপারেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং তারিক আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে ঢেউটিনের ব্যবহার বাড়ছে।'

শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রচুর সংখ্যক ঢেউটিন ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ঢেউটিন একসময় শুধু গ্রামাঞ্চলে ব্যবহার হতো। এখন নানান কারণে শহরগুলোতেও এর চাহিদা বাড়ছে।'

ফলে এ খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি নানান ধরনের ঢেউটিনের উৎপাদন বেড়েছে।

তিনি মনে করেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে ঢেউটিনের বাজার অনেকটা নিস্তেজ হয়ে আছে।

ঢাকার বংশাল রোডের মেসার্স লাল মোহাম্মদ অ্যান্ড সন্স'র প্রমোটার আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমদানি করা ঢেউটিনও বাজারে পাওয়া যায়।'

আমদানি করা ঢেউটিনগুলো মূলত জাপান, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসে। তবে, দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সস্তায় ঢেউটিন দেওয়ায় আমদানি ধীরে ধীরে কমছে।

যেভাবে ঢেউটিন শিল্পের কেন্দ্র হলো চট্টগ্রাম

১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিটাগাং স্টিল মিলস চালু হলে বাংলাদেশে ইস্পাত শিল্পের সূচনা হয়।

এই ইস্পাত বিলেট, লোহার শিট ও ঢেউটিন তৈরির কারখানাটি দেশের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে না পারায় সে সময় এর বাজার আমদানি-নির্ভর ছিল।

১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমদানি কমতে শুরু করে। তখন বেসরকারিভাবে ঢেউটিন উৎপাদন শুরু হয়।

১৯৯০-এর দশকে ইস্পাতের চাহিদা বাড়ায় শিল্পপতিরা বড় কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামে ঢেউটিনের কোল্ড রোল্ড কয়েলের মতো কাঁচামাল তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে আবুল খায়ের, পিএইচপি, টিকে, কেডিএস ও এস আলম এ খাতে বড় বিনিয়োগ করে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

38m ago