সাংহাইতে পৃথিবী দর্শন

ছোটবেলায় বাবার কাছে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের কথা বহুবার শুনেছি। সেগুলো আবার বদলেছেও। বিংশ শতাব্দীর ব্যাপক আবিষ্কারের ফলে ‘আশ্চর্য’কেও আর বুঝি সংখ্যায় বেঁধে রাখা যায় না। গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার আর ইন্টারনেটের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন দেশের নানা ঐতিহ্য আমাদের চোখের সামনে হাজির। যদিও সেগুলো ছবি। ফলে পৃথিবীতে আজ অনেকখানি চেনা—দেখা যদিও না হয়। চীনের শেনজেন শহরে গিয়ে দেখলাম, অনেকগুলো আশ্চর্য ও ঐতিহ্যই একটি বাগানে বন্দী।
 


সাংহাইয়ের উইন্ডোজ অব দি ওয়ার্ল্ডে ম্যানহাটনের ক্ষুদে সংস্করণ। ছবি: লেখকছোটবেলায় বাবার কাছে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের কথা বহুবার শুনেছি। সেগুলো আবার বদলেছেও। বিংশ শতাব্দীর ব্যাপক আবিষ্কারের ফলে ‘আশ্চর্য’কেও আর বুঝি সংখ্যায় বেঁধে রাখা যায় না।
গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার আর ইন্টারনেটের দৌরাত্ম্যে বিভিন্ন দেশের নানা ঐতিহ্য আমাদের চোখের সামনে হাজির। যদিও সেগুলো ছবি। ফলে পৃথিবীতে আজ অনেকখানি চেনা—দেখা যদিও না হয়। চীনের শেনজেন শহরে গিয়ে দেখলাম, অনেকগুলো আশ্চর্য ও ঐতিহ্যই একটি বাগানে বন্দী।
মিশরের পিরামিড‘উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা পৃথিবীর বাতায়নে তাকালেই দেখা যাবে নানা দেশের খণ্ড খণ্ড চিত্র। বিভিন্ন যুগের কীর্তি। যেন জানালা খুললেই পাওয়া যাচ্ছে মানুষের অনেক অর্জন, কীর্তি একটি জায়গায় সংরক্ষিত। ১৫ মে আমরা ছয়জন বাংলাদেশি সাংবাদিক গিয়েছিলাম এই প্রতিলিপি পার্কটি দেখতে। আগে শুনলেও চোখে দেখে আমরা সবাই কমবেশি অবাক হয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি সভ্যতার প্রতি চীনাদের শ্রদ্ধাবোধ দেখে।
সেই প্রাচীন যুগের অন্যতম আশ্চর্য পিরামিড এখানকারও অন্যতম আকর্ষণ। পার্কে প্রবেশের আগেই যেন তার বিজ্ঞাপন—যদিও এর রং নীল। ভেতরটা আদি পিরামিডের রঙেই গড়া এবং স্ফিংসও। সামনে রয়েছে মরুভূমির জাহাজ—উট।
কী আশ্চর্য! মরুভূমির একটু পরেই নায়াগ্রা জলপ্রপাত। শুধু উত্তর আমেরিকার ঠান্ডা আবহাওয়া এখানে অনুপস্থিত। তাতে কি! এই কৃত্রিম জলপ্রপাত প্রবল গরমেও আমাদের স্বস্তি তো দিয়েছে।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতগাড়িতে করে ঘোরার সময় আমাদের গাইড, হুয়াওয়ের প্রতিনিধি স্প্যারো বললেন তাড়াতাড়ি ছবি তুলতে। কারণ, দেখতে বাকি এ রকম অনেক কীর্তি—ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩০টি। কিন্তু এত সহজে কি মন ভরে! পাশেই তো ইতালির ভেনিস শহর। আমরা যেন অন্য দেশে, অন্য যুগে চলে গেছি। দালানকোঠা দেখে প্রশ্ন জাগে, কী করে চীনারা এত সুন্দর অনুকরণ করতে পারল।
অবশ্য তাজমহল দেখে মন ভরল না কেন জানি। হয়তো কোথাও তাড়াহুড়া ছিল অনেক কিছু এক জায়গায় ধারণ করতে গিয়ে। যেমন সিডনি অপেরা হাউস বুঝিয়ে দেয় আমরা কী দেখছি, কিন্তু সত্যি তো নয়! তাতে কি। জাপানের ফুজি পর্বতের ছোট আকৃতি, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো মন্দ কি! নানা রঙের মাছ লেকে; কার না ভালো লাগবে দেখতে। পাশেই আরও কয়েকটি স্থাপনা, রীতিমতো চোখধাঁধানো, মন ভরানো।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং স্ট্যাচু অব লিবার্টি বুঝতে অসুবিধা হয়নি। আইফেল টাওয়ার দেখলে যে কাউকে অবশ্যই এ চেষ্টার তারিফ করতে হবে।
চীনারা আমাদের দক্ষিণ এশীয় মানুষই ভেবেছে। ছবি তুলেছে মজা করে। আমাদের সামান্য সম্বল ছিল নে হাউ (কী খবর) বলা। অনেক আশ্চর্য একসঙ্গে, তার চেয়েও মুগ্ধ করে বোধ করি মানুষের উদ্দীপনা।
তাজমহলহয়তো আজকের প্রজন্মের কাছে এর অনেক কিছুই থাকাটা আকর্ষণীয় না-ও মনে হতে পারে। কিন্তু মানব সভ্যতার বিবর্তন ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে যাঁর চিন্তা আছে তিনি বুঝবেন, আজকের পৃথিবী মাত্র কয়েক বছরের নয়। এ জ্ঞানচর্চায় চীনাদের খ্যাতি পুরোনো। হাজার বছর ধরে জ্ঞানের আলোচনায় সুদূর চীন দেশ গমনের তাগিদ আমরা জেনে এসেছি। কিন্তু বর্তমান যুগেও চীন সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিষ্কার নয়।
মঙ্গোলীয় চেহারার মানুষ, বাচ্চাদের পুতুল বানানো, মাও সে তুংয়ের কমিউনিস্ট বিপ্লব বা অতি সাম্প্রতিক চীন-মার্কিন বৈরী সম্পর্ক—এই আমাদের চীন দর্শন। বড়জোর হারবাল ও আকুপাংচার সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা। চীনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তার সভ্যতার অর্জন সম্পর্কে আমরা প্রায় অন্ধকারেই।
উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড আমাকে অন্তত একটি ধারণা দেয় চীনের বর্তমান সম্পর্কে। এখানে চীন দেখেছে পৃথিবীকে। বলতে পারেন রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। নিজেকে দেখায়নি। চীনের প্রাচীর তো নেই এখানে।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

6h ago