চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ ছাড় নিতে কলকাতায় বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভীড়

Chaitra
চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ মূল্য ছাড়ের সুযোগ নিতে কলকাতায় বাংলাদেশি ক্রেতারাও ভিড় জমিয়েছেন। ছবি: স্টার

চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ মূল্য ছাড়ের সুযোগ নিতে কলকাতায় বাংলাদেশি ক্রেতারাও ভিড় জমিয়েছেন। এই সুযোগ পাওয়া যাবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তাই শেষ মুহূর্তে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় তিল ধারণের জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

একটা কিনলে একটা ফ্রি কিংবা নামি দামি ব্র্যান্ডের টি-শার্ট জিন্স মিলছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে। কিংবা দশ হাজার টাকার কেনাকাটা করলে ১৫ শতাংশ ‘ক্যাশ ব্যাক’ এমন অফার লুফে নিচ্ছেন কলকাতার ক্রেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশি ক্রেতারাও।

শুধু বাংলাদেশ বা ঢাকা থেকেই যে ক্রেতারা আসছেন তা নয়, কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের জেলা শহর কিংবা ভারতের অন্য রাজ্য থেকেও সৌরভের শহরে ভিড় বাড়াচ্ছেন ক্রেতারা।

ধর্মতলার প্রাণ কেন্দ্র নিউমার্কেট, সদর স্ট্রিট, মার্কুইজ স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদয় স্ট্রিট ছাড়াও পার্ক স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট, চৌরঙ্গী লেনের দোকানগুলো এখন বাংলাদেশের ক্রেতাদের ভিড়ে থৈ-থৈ করছে।

বনানীর বাসিন্দা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসরিন মেহবুবকে পাওয়া গেল চৌরঙ্গী লেনের একটি দোকানে।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে কলকাতার চৈত্র সংক্রান্তির সুযোগ নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “দেখুন এমনিতেই ঢাকার চেয়ে কলকাতার নিউমার্কেটের জিনিসের দাম কম। এর ওপর আবার তাঁরা বছরের এই মাসে ‘চৈত্র সেল’ বলে বিশেষ ছাড়ে পণ্য বিক্রি করেন। তাই দুদিনের জন্য এসেছিলাম। অনেক কিছু কিনলাম।”

চৈত্র বাংলা বছরের ১২তম মাস। বাঙালি ব্যবসায়ীরা মূলত এ মাসে বছরের হিসাব মেলান, মেলান স্টকও। তাই বছরের স্টক শেষ করতে গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের দোকানিরা চৈত্র মাসে পরিধেয় বস্ত্র থেকে গৃহস্থালির ওপর হরেকরকম ছাড় দিয়ে আসছে। এমন ছাড় চলে চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন অর্থাৎ সংক্রান্তি পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নব্বইয়ের দশক ধরে ‘চৈত্র সেল’ জনপ্রিয় হতে শুরু করে কলকাতায়। প্রথমে ‘সিটি অফ জয়’ দিয়ে শুরু হলেও এখন রাজ্যের ১৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বিশেষ ছাড়ের মোড়কে বেচাকেনার এই মহা-উৎসব।

স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ এখন বছরের দুটি ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজো এবং ঈদের কেনাকাটার চেয়েও বড় হয়ে গিয়েছে- বলছেন অনেক ক্রেতা।

ফ্যান্সি ঘাগরা, লং-স্যুট ছাড়াও এবার সামু-স্যুটিং নামে মেয়েদের নতুন পোশাক এসেছে কলকাতার বাজারে। হাল ফ্যাশনের এই পোশাকেও মিলছে ছাড়। নিউমার্কেটের একটি নামি দোকানের বিক্রেতা অরবিন্দ ঝাঁ বললেন, “সত্যি কথা বলতে আমরা সারা বছরই ‘রিজেনেবল’ দামে পোশাক বিক্রি করি। কিন্তু চৈত্র মাসে আমাদের ক্রেতাদের সামনে আমরা আরও কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি, যেমন এবার বাজারে আসা নতুন পোশাক কিনলে আমরা ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। যে কোন কার্ডে (ভিসা কিংবা মাস্টার) দশ হাজার টাকার কেনাকাটা করলে আমরা দশ শতাংশ ক্যাশ ব্যাকও দিচ্ছি।

ধানমন্ডির বাসিন্দা আরিফ রহমান এবং তাঁর স্ত্রী রেজওয়ানা রহমান মাত্র তাঁদের সাত মাসের কন্যা নুসরাত রহমান তিশাকে নিয়ে এসেছেন কলকাতায়। মেয়ের চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ থাকতে হয়েছে। ঢাকা থেকেই প্ল্যান ছিল মেয়ের চিকিৎসা করে ফেরার পথে নিউমার্কেটে ‘চৈত্র সেল’-এর সুযোগ নেবেন এই দম্পতি। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁদের দেখা মিলল নিউমার্কেটের লিন্ডসে স্ট্রিটের একটি নামি দোকানে।

দ্য ডেইলি স্টারকে রেজওয়ানা বললেন, “ঢাকায় এই ধরনের বেচাকেনার উৎসব হলে মানুষ সেটাও লুফে নেবেন। কলকাতায় হরেকরকম জিনিস পাওয়ার সুযোগের সঙ্গে বাড়তি পাওয়া হচ্ছে চৈত্র মাসের এই বিশেষ ছাড়। তাই মেয়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার সময় ছাড়ের বিশেষ সুযোগটাও নিয়ে ফিরছি।”

পূর্ব ভারতের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের প্রাক্তন সহসভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা সন্তোষ রঞ্জন সাহা মনে করেন, চৈত্র সেল মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের কাছে সবচেয়ে বড় কেনাকাটার উৎসব।

পুজো কিংবা ঈদ এই দুই ধর্মীয় উৎসবে মানুষ যা কেনাকাটা করেন, চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে তাঁরা এর চেয়ে অনেক বেশি কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন ক্রমশ বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

Comments

The Daily Star  | English
Touhid Hossain Rohingya statement

Rohingya repatriation unlikely amid Myanmar’s civil war: foreign adviser

He highlights the 2017 mass exodus—prompted by brutal military crackdowns was the third major wave of Rohingyas fleeing Myanmar

29m ago