১০ বছর পর স্বজনদের কাছে ফিরছেন মোর্শেদা

প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শেষ। এবার স্বজনদের কাছে ফেরার সময়। প্রায় পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ফিরছেন মোর্শেদা খাতুন (৪০)।
Morsheda Khatun
বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় মোর্শেদা খাতুন। ছবি: স্টার

প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শেষ। এবার স্বজনদের কাছে ফেরার সময়। প্রায় পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ফিরছেন মোর্শেদা খাতুন (৪০)।

জামালপুর থেকে দশ বছর আগে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন এই নারী।

বহরমপুর হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত চৌধুরী তার বাংলাদেশে ফেরার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সেচ্ছাসেবী সংস্থা অঞ্জলির কর্মকর্তা অদিতি বসু বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকালে (১৩ সেপ্টেম্বর) নদীয়ার হরিণঘাটা সীমান্ত দিয়ে মোর্শেদা খাতুনকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এই সংক্রান্ত যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার চিঠি হাতে এসে পৌঁছেছে- যোগ করেন অদিতি।

এই ব্যাপারে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের হেড অফ কনসুলার বি এম জামাল হোসেন বলেন, “মোর্শেদার মতো আটকে থাকা সব বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরানো ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এই কাজ করছি।”

বাংলাদেশের জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা নমাজ উদ্দিন নন্দা মিয়ার মেয়ে মোর্শেদা খাতুন। তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। নিজের গ্রামের পাশের গ্রাম গোজামানিকা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী হাবিবুর শেখের সঙ্গে সংসারে বিরোধ ছিল তার। এক রাতে মোর্শেদাকে জোর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু, সেখান থেকে হঠাৎই একদিন নিখোঁজ হয়ে যান মোর্শেদা খাতুন। এরপর মোর্শেদা ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ভুবনেশ্বর আসেন। সেখান থেকে তিনি আসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলায়। বর্ধমানের পুলিশ অচেনা ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু, তাদের মনে হয়েছে মোর্শেদা মানসিকভাবে অসুস্থ। তারাই ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি মোর্শেদাকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে।

মোর্শেদা খাতুনকে কাউন্সিলিং করেছেন অঞ্জলির এমন অনেকেই বললেন, কোনও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মোর্শেদাকে আসলে সীমান্ত দিয়ে কেউ পশ্চিমবঙ্গে রেখে গিয়েছিল। এমন কি তাকে ড্রাগও খাওয়ানো হতো নিয়মিত। সে কারণে মোর্শেদার বেশ কয়েক বছরের স্মৃতির প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ২০১৩ সালের আগের থেকে নিখোঁজ হওয়া ২০০৮ পর্যন্তও তেমন কোনও তথ্য মোর্শেদার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে মোর্শেদা এটা নিশ্চিত করেছেন, তার ওপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছিল। একজন মহিলার সঙ্গে ছিলেন তিনি। তাকে একটি রেল স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আর তেমন কোনও তথ্য মোর্শেদা জানাতে পারেননি।

বহরমপুর হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বাংলাদেশের মোর্শেদা খাতুন। প্রথম দিকে শুধু ডাক্তারি চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু এরপর চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রথমে কিছু দিন কাউন্সিলিং এবং এরপর মিউজিক থেরাপি, যোগ ব্যায়ামসহ নানাভাবে মোর্শেদাকে সুস্থ করার চেষ্টা চালায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও বিকল্প চিকিৎসাগুলো দেয় পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রথম সারির সেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অঞ্জলি’।

ওই সংস্থার কর্মকর্তা অদিতি বসু এবং মোর্শেদার মিউজিক থেরাপি বিশেষজ্ঞ স্বাতীলেখা ধরগুপ্ত বললেন, “মোর্শেদা খাতুন তার স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন অনেক দিন আগেই। তারা ব্যক্তিগত মাধ্যমে মোর্শেদার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। এমনকি, মোর্শেদার সঙ্গে টেলিফোনে বার দুয়েক কথাও হয় জামালপুরের তার পরিবারের সঙ্গে। ওই সময় জামালপুরের দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিনিধিও এই বিষয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।

কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে এখনও মোর্শেদার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও আবেদন এসে পৌঁছায়নি বহরমপুরের হাসপাতালটিতে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবিহীন কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিতেও পারছিলো না।

তবে বিষয়টি গত মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে উপদূতাবাসের নজরে এনে আবেদন করে ‘অঞ্জলি’। প্রশাসনিক এই পুরো বিষয়টির তরান্বিত করার ব্যবস্থা করে ডেইলি স্টারের কলকাতা প্রতিনিধি।

এদিকে, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ের কাছে ফিরতে পারার কথা শুনে দারুণ খুশি মোর্শেদা খাতুন। আজ (১২ সেপ্টেম্বর) তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে তিনি জানান, “আমি অনেক অনেক খুশি।” ‘অঞ্জলি’-র অদিতি বসু, স্বাতীলেখা ধরগুপ্তসহ অনেকের নাম বলে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতার কথা জানান তিনি। বলেন, এই ব্যাপারে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কথা। এছাড়াও, যে গণমাধ্যমে তার জীবন নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে তাদের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন মোর্শেদা।

সেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে মোর্শেদাকে ‘মিউজিক থেরাপি’ দেওয়ার কাজটি করেছেন স্বাতীলেখা ধরগুপ্ত। টেলিফোনে তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, “প্রায় চার বছর ধরে মোর্শেদাকে দেখছি। ভীষণ ভাল একজন মানুষ। সুস্থ হয়ে বাড়ির ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছিল সে। এবার সে বাড়ি ফিরছে- এটাই আমরা চেয়েছিলাম। তবে আমরা সবাই মোর্শেদাকে খুব মিস করবো।”

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

9h ago