টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

রোমাঞ্চকর লড়াই জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে টানটান উত্তেজনার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারত জিতল ৭ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর দ্বিতীয়বারের মতন এই সংস্করণের চ্যাম্পিয়ন হলো তারা।
India
ছবি: আইসিসি

ম্যাচ শেষ করে বসে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। আনন্দে চোখে তার তখন জল।  বাকিরা ছুটে এলেন তার কাছে, শেষ কয়েক মিনিট যা হয়ে গেল তা যেন অবিশ্বাস্য। অসাধারণ পালাবদলের ম্যাচে ভারত মাতল উৎসবের রঙে। হেনরিক ক্লাসেনের ঝড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মুঠোয় চলে যাওয়া ম্যাচ বের করে নিয়ে এসে শেষ ওভারের রোমাঞ্চ জিতে নিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয় ভেঙে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো রোহিত শর্মার দল।

বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে টানটান উত্তেজনার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারত জিতল ৭ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর দ্বিতীয়বারের মতন এই সংস্করণের চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। আগে ব্যাট করে ১৭৬ রানের পুঁজি পায় ভারত, রান তাড়ায় প্রথমবার ফাইনালে উঠা দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ১৬৯ রানে। 

১৭৭ রান তাড়ায় বাজে শুরুর পর ক্লাসেনের তাণ্ডবে ম্যাচ হেলে যায় প্রোটিয়াদের দিকে। শেষ চার ওভারে জিততে দক্ষিণ আফ্রিকার চাই ২৬ রান। হাতে তখন ৬ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা কয় বল আগে খেলা শেষ করবে সেই বাজিও হয়ত ধরতে যাবেন তখন কেউ। ওই সময়ই মোড় ঘুরিয়ে দেন হার্দিক। ১৭তম ওভারের প্রথম বলটা স্লোয়ার করেছিলেন ওয়াইড লাইনে। ক্লাসেন তাতে ব্যাট ঘুরিয়ে ক্যাচ দেন কিপারের গ্লাভসে। ২৭ বলে ৫২ করে হাঁটা ধরেন তিনি। ম্যাচ তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই। ওই ওভারে দেন ৪ রান।

১৮তম ওভার করতে এসে পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বল করা জসপ্রিট বুমরাহ ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের ছবি। মার্কো ইয়ানসেনকে আউট করে দেন স্রেফ ২ রান। তাতে শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন দাঁড়ায় ২০ রানের।  আর্শদীপ ধরে রাখেন স্নায়ু। কেশব মহারাজ-ডেভিড মিলারকে বেধে রাখেন ক্রিজে। তার ওভার থেকেও আসেনি ৪ রানের বেশি।

শেষ ওভারে ১৬ রান আটকানোর ভার পড়ে হার্দিকের উপর। তার ল ফুলটস ছক্কায় উড়াতে অনেকটা সফল হয়ে যাচ্ছিলেন মিলার। বাউন্ডারি লাইনে প্রবল চাপে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ হাতে জমান সূর্যকুমার যাদব। ১৭ বলে ২১ করে মিলারের আউটে ম্যাচের গতিপথ তখন চূড়ান্ত হয়ে যায়। হার্দিকের বাকি বল থেকে আর হিরো হতে পারেননি প্রোটিয়া টেল এন্ডারের কেউ।

এবার বিশ্বকাপে ফাইনালের আগে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বিরাট কোহলি। ৭ ম্যাচে করেছিলেন কেবল ৭৫ রান। রোহিত বলেছিলেন ফাইনালের জন্য সেরাটা জমিয়ে রেখেছেন এই ব্যাটার। আসলেও যেন তাই। দলের চপে ৫৯  বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে কোহলিই ম্যাচ সেরা। 

তবে এই সেরার তকমা অনায়াসে দেয়া যেত বুমরাহকে। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। যেসব ধাপে বল করতে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন তিনিই। ২০ রানে ৩ উইকেট নেওয়া হার্দিকও পেতে পারতেন সেরার কৃতিত্ব। ক্লাসেনকে ফিরিয়ে তিনিই তো মোড় ঘুরিয়ে দেন, শেষ ওভারে ধরে রাখেন স্নায়ু। এদিন আসলে ভারত জিতেছে তীব্র দলীয় তাড়নায়। সেরা তাই অনেকেই। 

 

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসে দ্বিতীয় ওভারেই হানা দেন বুমরাহ। স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে উড়িয়ে দেন রেজা হেনড্রিকসের স্টাম্প।  পরের ওভারে আর্শদীপ সিংয়ের বলে এইডেন মার্করামের দুর্দান্ত ক্যাচ গ্লাভসে জমান রিশভ পান্ত। চ্যালেঞ্জিং পুঁজি তাড়ায় ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে প্রোটিয়ারা।  দলের ভীষণ চাপে দারুণ জুটি গড়েন ডি কক-ট্রিস্টিয়ান স্টাবস। ৩৮ বলে তারা যোগ করেন ৫৮ রান। ২১ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে স্টাবসের ৩১ রানের ইনিংস থামান অক্ষর প্যাটেল। বিপদজনক এই ব্যাটারকে বোল্ড করে দেন তিনি।

ডি কক চালিয়ে যেতে থাকেন। তার সঙ্গে নেমেই ঝড় তুলেন ক্লাসেন। ২৩ বলে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন আর্শদীপ।

তবে ক্লাসেন খেলা দ্রুত ভারতের মুঠো থেকে বের করে নিতে থাকেন। তার সঙ্গে মিলে ডেভিড মিলারও খেলতে থাকেন ঝাঁজালো। স্পিনার পেয়ে ক্লাসেন ১৫তম ওভারে অক্ষরকে দুই ছক্কা, দুই চারে ২৪ রান তুলে ম্যাচ একদম নাগালে নিয়ে আসেন। ম্যাচ থেকে তখন মোটামুটি ছিটকে  ভারত। কে জানত শেষ ৪ ওভারে অপেক্ষা করছে প্রবল রঙ বদল।

ফাইনালের দিন টস জিতে ব্যাটিং বেছে রোহিত আগের মতই আগ্রাসী শুরুর ঢঙে ছিলেন। এবার আর হয়নি। হতে দেননি কেশব মহারাজ। রোহিত পর কোন রান করার আগেই ফিরিয়ে দেন পান্তকে। সূর্যকুমার যাদব নেমে বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।

তবে কোহলি ছিলেন অবচিল। শুরু থেকে রান বাড়াচ্ছিলেন তিনিই।  ফাইনালের মঞ্চ পেয়ে জ্বলে উঠেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার। কোহলি ইনিংসের মেরুদণ্ডের ভূমিকা নেন। তাকে এক পাশে রেখে ঝড় তুলেন অক্ষর।

দ্রুত উইকেট পড়ায় শিভম দুবের বদলে তাকে নামিয়ে ফাটকা কাজে লাগায় ভারত। বিশেষ করে মহারাজের স্পেল এলোমেলো করতে থাকেন তিনি। তার ইনিংস থেমেছে অবশ্য আয়েশি ঢঙে। কিপারের হাতে বল রেখে রান নিতে গিয়ে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ফিরতে করেন দেরি। ৩১ বলে ৪ ছক্কায় করে যান ৪৭।

দুবেও তার ভূমিকা রেখেছেন। ১৬ বলের উপস্থিতিতে করেছেন ২৭। হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজার খেলার জন্য বেশি বল বাকি ছিলো না। ব্যাট করার জন্য উইকেট বেশ ভালো হলেও ১৭৬ রানের পুঁজি ফাইনালের মতন মঞ্চের জন্য ছিলো বেশ জুতসই। ক্লাসেন, ডি ককদের ঝলকের পরও স্নায়ু ধরে রেখে ভারত ম্যাচ জিতে দেখিয়েছে জেতার মতন রানই আনতে পেরেছিলো তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Pension protests bring public univs to a halt

Teachers’ indefinite strike over pension benefits paralysed public universities across the country yesterday.

2h ago