আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

পাকিস্তানকে উড়িয়ে ভারতের জয়ের ধারা অব্যাহত

ভারতের বোলাররা জয়টা আনুষ্ঠানিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসেই

পাকিস্তানকে উড়িয়ে ভারতের জয়ের ধারা অব্যাহত

একে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে কখনোই জিতেনি পাকিস্তান, তার উপর দুইশর কম রানের পুঁজি নিয়ে বিশ্বকাপে কখনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জিততে পারেনি দলটি। তাই ১৯১ রানের পুঁজি নিয়ে উজ্জীবিত ভারতের বিপক্ষে জয় চাওয়া যেন বিলাসিতাই ছিল দলটির জন্য। যদিও ক্রিকেটে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তবে আহমেদাবাদে কোনো নতুন কিছু হয়নি। বিশ্বকাপে আরও একটি ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারত।

তবে ভারতের বোলাররা জয়টা আনুষ্ঠানিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসেই। রোহিত শর্মা ও শ্রেয়াস আইয়ারের ফিফটিতে অনুমিত ফলটাই হয়েছে এরপর। ভারত জিতেছে ৭ উইকেট ও ১৯.৩ ওভার হাতে রেখে। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের গল্পটাও থাকল একই ধারায়। ভারত ৮, পাকিস্তান ০।

লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই দুই চার। পরের ওভারে আরও তিনটি। ভারতের যেন দুই পয়েন্ট হাসিল করার একটু বেশিই তাড়া ছিল! উড়ন্ত শুরুর পর তৃতীয় ওভারেই যদিও ডেঙ্গুর কারণে প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে না পারা শুবমান গিল আউট হয়ে যান ১৬ রান করে। শাহীনের বলে কাট শটে বলটা সোজা দিয়ে দেন পয়েন্টে শাদাবের হাতে।

তবে উড়ন্ত ভারতের উচ্চতা কমেনি তাতে। হাসান আলী-শাহীন আফ্রিদিদের উপর চড়াও হন রোহিত শর্মা! কোহলি এসে সঙ্গ দেন। ৬.৪ ওভারেই ভারত পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। রোহিত ঠিক চেনা ছন্দেই ছিলেন, পাওয়ারপ্লেতেই ভারত তাই ৭৯ রান তুলে ফেলে।

ওদিকে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারেই বিরাট কোহলি আউট হয়ে যান ১৬ রানে। তবে রোহিতের ব্যাটে ভারত ১৪তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায়। তার আগে রোহিত ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৩৬ বলেই। ভারতকে দ্রুত জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পথে আরেকটি সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন রোহিত। কিন্তু শাহীন আফ্রিদির অফ-কাটারে মিসটাইমিংয়ে আউট হয়ে যান। ৬৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংস গড়েন ছয়টি করে ছক্কা-চার নিয়ে।

২২তম ওভারে রোহিত দলকে ১৫৬ রানে রেখে আসার পর রাহুল-আইয়ার মিলে অনায়াসে আনুষ্ঠানিকতা সারেন। শ্রেয়াস আইয়ার চার মেরে ৬২ বলে ফিফটির সঙ্গে দলকেও জিতিয়ে যখন মাঠ ছাড়েন, তখনও বাকি ১১৭ বল।

এর আগে যদিও আহমেদাবাদে টস জিতে বোলিংয়ে সূচনাটা মনের মতো করতে পারেনি ভারত। প্রথম দুই ওভারেই চারটি চার পেয়ে বসে পাকিস্তান। মুভমেন্ট ছিল না মোটেও, এক প্রান্তে নিখুঁত লাইন-লেংথে বোলিং করে নিজের চার ওভারের স্পেলে যদিও ১৪ রানের বেশি দেননি বুমরাহ। সিরাজ শুরুতে লাইন নিয়ে ভুগেছেন, প্রথম তিন ওভারেই দিয়েছেন ২২ রান। এরপর ৮ম ওভারে এসে তার ক্রস-সিম ডেলিভারি কিছুটা লো হয়ে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে ফেলে আব্দুল্লাহ শফিককে।

২০ রানে শফিক ফিরে যান। ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৪৯ রানে। হার্দিক এসে খরুচে প্রমাণিত হন, প্রথম দুই ওভারে দিয়ে ফেলেন ১৮ রান। দুর্দান্ত ছন্দে ব্যাট করতে থাকেন ইমাম উল হক। কিন্তু হুট করেই ১৩তম ওভারে হার্দিকের ফুলার লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট হয়ে যান ইমাম। ৩৬ রানের ইনিংসে ইমাম মারেন ছয়টি চার।

৭৩ রানে ইমামের বিদায়ের পর পাকিস্তানের সবচেয়ে ভরসার জুটি বাধেন বাবর-রিজওয়ান। দুজনেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন। কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজাও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের চাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। ১৯তম ওভারে একশ পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। তবে জাদেজা-কুলদীপের সামনে একটা সময় বাউন্ডারি খরার সাথে স্ট্রাইক বদলও নিয়মিত হচ্ছিল না পাকিস্তানের। ২৭ ওভারে ১৩১ রান আনতে পারে পাকিস্তান।

সিরাজ বোলিংয়ে এসেই এরপর ১৩ রানের খরুচে ওভার করেন। বাবর তার ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৫৭ বলেই। পাকিস্তান রানের চাকার গতি বাড়াতে শুরু, কিন্তু সেই সময় বেশি যেতে না যেতেই সিরাজ হাজির উইকেট নিয়ে। বাবরকে বোল্ড করে ফেলেন ৫০ রানেই। ৭৩ রানের জুটি ভেঙ্গে ভারত চেপে বসে পাকিস্তানের উপর। সৌদ সাকিলকে এলবিডাব্লিউ করে বিদায় দেন কুলদীপ, ইফতিখারের গ্লাভসে কুলদীপের গুগলি লেগে স্টাম্প ছুঁয়ে ফেলে। সাকিল-ইফতিখার দুজনেই এক অঙ্কে ফিরে গেলে ১৬৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেরার লড়াইয়ে নামে পাকিস্তান।

এদিকে বুমরাহকে ফেরান রোহিত, বুমরাহ হাজির হন ম্যাজিক নিয়ে। দুর্দান্ত অফ কাটারে রিজওয়ানকে ৪৯ রানেই থামিয়ে দেন। ধাক্কার সবে শুরু, পরের ওভারে এসে বুমরাহ ফিরিয়ে দেন শাদাব খানকে বোল্ড করে। নাওয়াজ-হাসান কেউ টিকেননি বেশিক্ষণ। শাহিন-হারিসও স্বাভাবিকভাবেই পারেননি বেশিদূর নিয়ে যেতে। শেষ আট উইকেট ৩৬ রানে হারিয়ে ৪৩ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। শুধু শার্দুল ঠাকুর দুই ওভার বল করে কোন উইকেট পাননি। বাকি সবাই প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। অলরাউন্ড বোলিং আক্রমণের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বেরিয়ে আসে 'আনপ্রেডিক্টেবল' পাকিস্তান! তবে দ্বিতীয় ইনিংসে রোহিত-আইয়ারের ব্যাটিং কোন অঘটন ঘটতে দেয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago