‘ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যদি অতৃপ্তিটা থাকত তাহলে খুব ভালো লাগত’

শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্টের মতে এবার তারা পেয়েছেন সেরা সাফল্য, ছাড়িয়ে গেছেন আগের সব আসরকে। পরিসংখ্যানে সেটা সত্য হলেও  বাস্তবতার ছবিও কি তাই?
বাংলাদেশ দল

শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্টের মতে এবার তারা পেয়েছেন সেরা সাফল্য, ছাড়িয়ে গেছেন আগের সব আসরকে। পরিসংখ্যানে সেটা সত্য হলেও  বাস্তবতার ছবিও কি তাই? পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ যে আসর শেষ করেছে নেদারল্যান্ডসের পেছনে থেকে। বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে পর্যালোচনা করেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স।

আগের সাত আসরে মূল পর্বে বাংলাদেশের জয় ছিল কেবল একটি। ২০০৭ সালে একদম প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে পাওয়া সাফল্যই এতদিন ছিল সেরা। এরপরের ৬ বিশ্বকাপে মূল পর্বে কোন ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। এবার এসেছে দুই জয়। সেদিক থেকে সেরা সাফল্যই। তবে জয় দুটি এসেছে র‍্যাঙ্কিংয় নিজেদের থেকে পিছিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে সম্ভাবনা জাগিয়ে হার, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই করতে না পারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের ভুল আউটের পর ভেঙে পড়া।

সব মিলিয়ে কেমন বিশ্বকাপ গেল? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন নাজমুল। 

প্রস্তুতি

'বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা মোটেই ভালো হয়নি আমাদের। শেষ মুহূর্তে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলো দল লীড করার জন্য, কনসাল্টেন্টের (শ্রীরধরন শ্রীরাম) কথা বলছি। এত অল্প সময়ে একজনকে দায়িত্ব দিলে তার পক্ষে পুরো ছবিটা নেওয়া খেলোয়াড়দের সম্পর্কে, সেটা কঠিন। কে কেমন, কোন জায়গার ঘাটতি কীভাবে কাভার করতে পারি। কি হতে পারে , না হতে পারে সেটা অল্প সময়ে বোঝা অসম্ভব। যে কারণে সাব্বির (রহমান) বা (মেহেদী হাসান) মিরাজকে ওপেন করানোর ব্যাপারটা এসেছে। আমি জানি না এতে উনার সম্পৃক্ততা কতটা ছিল। এটা খুবই পুউর আইডিয়া ছিল। এতে সময় ক্ষেপণ হয়েছে। আমাদের সময় ছিল খুব কম। সেখানে অনেক সময় এসবের পেছনে দিয়েছি।'

'একটা ব্যাপার ভালো ছিল আমরা যাই ছিলাম আমরা ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ছিলাম। মিথ্যা আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাইনি। যেটা গতবার গিয়েছিলাম। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আমরা ভেবেছি আমরা অনেক ভাল দল, অনেক কিছু করে ফেলেছি। সেটা ছিল মিথ্যা আত্মবিশ্বাস। এবার সেরকম কিছু ছিল না। এবার যা সত্যিই সেটা নিয়ে গিয়েছি। এই কারণে এবার দুটো জয় এসেছে। না হলে দুটো জয় আমরা পেতাম কিনা সন্দেহ আছে। গতবারের মতো ফেইক কনফিডেন্স নিয়ে গেলে এই দুই ম্যাচও হারতে পারতাম। সেদিক থেকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়েছি। যদিও আমাদের থেকে র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচের দল আমাদের উপরে থেকে আসর শেষ করেছে। সেটা খুব সম্মানজনক না। এই জায়গায় খেদ থেকে গেল। অনেকে বিশ্বকাপকে সফল বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের যে শক্তি সেটা যদি সত্যিকার অর্থে ব্যবহার করতে পারতাম আমরা আরও ভাল করতে পারতাম, সুযোগ ছিল।'

খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স

'বিশ্বকাপে যে কজন ম্যাচ খেলেছে তাদের পারফরম্যান্স যদি আমরা দেখি, তাদের সক্ষমতাও যদি দেখি তাহলে  অনেকেরই পারফরম্যান্স খুব খারাপ। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে তেমন ভালো পারফরম্যান্স করেনি। ব্যাটসম্যানদের দিকে যদি দেখি শান্তর দুটো ইনিংস আর লিটনের একটা ইনিংস। এর বাইরে কিন্তু তেমন কিছু নেই। আফিফ হয়ত টুকটাক কিছু রান আছে। বোলিংটা তুলনামূলক ভাল ছিল। আমাদের পেস বোলারদের কারণে মূলত দুইটা ম্যাচ জিতেছি। এই একটা জায়গায় বোধহয় ভাল করেছি। অন্যতায় সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে ভাল করতাম আরও। ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যদি অতৃপ্তিটা থাকত তাহলে খুব ভালো লাগত।'

'পরিসংখ্যানে সেরা সাফল্য কিন্তু আমাদের থেকে নিচের দল যদি উপরে উঠে যায় তাহলে সেটা আমাদের জন্য উদযাপনের বিষয় না। এবং হয়ত এসব দলের বিপক্ষে আমাদের আগামীতে খেলতে হবে পারে। তখন আমরা কি করব ভাববার বিষয় আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বস্তিতে নেই এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে।'

এই বিশ্বকাপের পর আগামীর দল থিতু কিনা

'না সেটাও বলা যাচ্ছে না (থিতু দল কিনা)। আমার মনে হয় সামনে কোন টি-টোয়েন্টি সিরিজ হলে বেশ কিছু বদল দেখব বা দেখতে পারি। সেটাই ইঙ্গিত করে আমরা থিতু দল না। আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল সেটা পূরণ হয়নি। মিডল অর্ডারে (ইয়াসির আলি) রাব্বির উপর ভরসা করতে পারিনি, (নুরুল হাসান) সোহান প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আফিফও পারেনি। এই জায়গাগুলোতে ঘাটতি রয়ে গেছে। এতে বোঝা যায় তারা এখনো তৈরি হয়নি। পার্শ্ব চরিত্রে থাকা এক জিনিস আর মূল চরিত্র এক জিনিস। যারা তুলনামূলক কম অভিজ্ঞ। আফিফ বলি বা রাব্বি বলি বা সোহান বলি যারা সাইড রোলে ছিল। তারা এখন মেইন রোলে চলে এসেছে। এটা কিন্তু তাদের জন্য ভিন্ন। '

Shakib Al Hasan

সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স

(ব্যাটিং: ৫ ম্যাচে ৮.৮০ গড়ে ৪৪ রান, স্ট্রাইকরেট ৯৫.৬৫বোলিং: ৫ ম্যাচে ১৯ গড় আর ৮.৭৮ ইকোনমিতে ৬ উইকেট)

'আমার মনে হয় ওটা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেছে (বড় কিছু করতে না পারার ক্ষেত্রে)। সাকিবের কাছ থেকে আমাদের যে বড় প্রত্যাশা ছিল ব্যাটে ও বলে। সেটার ধারেকাছেও ছিল না তার পারফরম্যান্স। ওইটা থাকলে হয়ত দল আরেকটু থিতু হতে পারত।  ও যে জায়গায় ব্যাট করেছে বা বল করেছে। সেটা দলকে স্থিরতা দিতে পারত। ওর প্রেজেন্সটা আরও দরকার ছিল। অধিনায়কত্ব খুব ভালো, কিন্তু ব্যাটে-বলে অবদান দরকার ছিল।'

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

18h ago