অসাধু চক্রে বন্দি টেকনাফ স্থলবন্দর

আমদানি ও রপ্তানি পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় বন্দরের মাধ্যমে, এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে চলতে পারে। এই প্রবেশ পয়েন্টগুলোতে কার্যকর স্ক্রিনিং ব্যবস্থা এবং সব ধরনের দুর্নীতি ঠেকানো জরুরি।

তবে, টেকনাফ স্থলবন্দর এমনই একটি প্রবেশপথ, যেটি সব ধরনের অনিয়মের কারণে বারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য এই স্থলবন্দর দিয়েই পরিচালিত হয়। কিন্তু, অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে বিপুল পরিমাণে মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা প্রবেশ করলেও এগুলো বাজেয়াপ্ত করার রেকর্ড নেই। পণ্য নিয়ে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে কর ফাঁকির জন্যও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

গত বুধবার স্থলবন্দর ও এর আশপাশের পরিস্থিতি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সেখানকার বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে।

জানা গেছে, সেখানে এমন চক্র রয়েছে যারা বছরের পর বছর আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জাল করার পাশাপাশি কর ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের স্ক্যানিং সিস্টেম দুর্বল এবং মাদকের মতো অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্যের চোরাচালান বন্ধে কোনো নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

বছরের পর বছর টেকনাফ স্থলবন্দর কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, তাদের সহযোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। একটি স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানিং মেশিন না থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তারা র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় ২ শতাংশ কার্গো পরীক্ষা করেন। এটি কোনো আমদানি চালানের ভিতরে অবৈধ পণ্য শনাক্ত করতে যথেষ্ট নয়।

উদ্বেগজনক হলো, মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী নৌযানগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কঠোর তল্লাশি ছাড়াই বন্দরে প্রবেশ করে। মিয়ানমারের নাগরিকরা নৌকা নিয়ে কর্মী পরিচয়ে আশেপাশের বাজারে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। একইভাবে, স্থানীয় ব্যবসায়ী, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট ও বন্দর শ্রমিকরাও অবাধে নৌকায় চলাচল করে।

যে বিষয়টি পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করে তা হলো টেকনাফ স্থলবন্দরে এখন পর্যন্ত কোনো ইয়াবার চালান আটক করা হয়নি। অথচ এটিকেই বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের প্রধান পথ বলে ধারণা করা হয়।

ভালো সংবাদ হলো, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে চিহ্নিত করেছে এবং কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে গত সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তদন্তে জানা গেছে, এই চক্রের নেতা গত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা চোরাচালান ও নথি জালিয়াতির মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিষিদ্ধ পণ্যের চোরাচালান ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু বিবেচনা করলে টেকনাফ স্থলবন্দর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বন্দরটিতে প্রয়োজন দক্ষ লোকবল ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

UP chairmen’s absence: People suffer amid service disruptions

The situation worsened after the launch of "Operation Devil Hunt" in early February

11h ago