আমরা কি কখনো নিষ্কলুষ নির্বাচন পাবো?

গতকালই আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনটি বিদায়ী উপহার ছিল, তা না হলে এটিও বিতর্কিত হতো।

গতকালই আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনটি বিদায়ী উপহার ছিল, তা না হলে এটিও বিতর্কিত হতো।

তবে এই আমাদের ভালো লাগার অনুভূতি নষ্ট হতে মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার মেয়র নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী সুযোগ্য নেতা হিসেবে জয়লাভ করলেও অন্তত ১৩ কাউন্সিলর আছেন যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারাও জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন বিএনপি ও ৫ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

সম্ভাবনা আছে, এসব মামলার অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। তবে তাতেও তা এড়ানো যায় না যে, নির্বাচন কমিশন প্রার্থী যাচাইয়ের কাজটি সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এক বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'এই মামলাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের একটি অপরিহার্য অংশ এবং ভোটারদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানানো কমিশনের দায়িত্ব।'

তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের প্রাথমিক তথ্যও আপলোড করেনি। এর অর্থ, নির্বাচন কমিশন জনগণের তথ্যের অধিকারকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভুল তথ্যের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন হলো—নির্বাচন কমিশন কেন এমনটা হতে দিলো? এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এটি এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা, যা আমরা দীর্ঘ সময় ধরে দেখিনি, সেটিকে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কল্পনা করুন ভোটের দিন পর্যন্ত প্রায় ১৮ দিন ধরে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। পেশী শক্তির কোনো প্রদর্শন ছিল না। ভোটাররা কোনোরকম ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এমনকি ফল ঘোষণার পর ২ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কুশল বিনিময়ও হয়েছে। আমরা শেষ কবে দেশে এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণা দেখেছি?

এর সঙ্গে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রেকর্ডের তুলনা করুন, যেখানে অন্তত ২ জন নিহত হয়েছিলেন। পুরো নির্বাচনী প্রচারণায় ছিল সংঘর্ষ।

এমনকি ৫ ধাপে পরিচালিত চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ভাগ্যবশত এই ধরনের ঘটনা ও বিভিন্ন নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের শেষ পর্যন্ত বৈশিষ্ট্য হয়েই ছিল।

কিন্তু, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রচারণা আমাদের আশা দিয়েছে যে, আমরা অতীতকে পরিবর্তন করতে না পারলেও ভবিষ্যতকে এর থেকে মুক্ত করতে পারি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্পর্কে সর্বশেষ যেসব আইনি তথ্য বেরিয়ে এসেছে সেসব এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে এটি আসন্ন নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেয় যে, আমাদের মতো রাজনৈতিক পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনার সময় অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখার ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

2h ago