জাবি হোক প্রতিবন্ধীবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। কিন্তু, আক্ষেপের বিষয় হলো এখনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের উপায় খুঁজে বের করতে পারেনি জাবি কর্তৃপক্ষ।

প্রতি বছর এখানে 'প্রতিবন্ধী কোটার' আওতায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও তাদের সঠিক পাঠ উপকরণ এবং কোনো সংরক্ষিত আসন নেই।

কোনো স্ক্রাইব বা সহকারীর সহায়তা ছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়া, এমনকি ক্লাস করা কষ্টসাধ্য হলেও তারা অফিসিয়াল সহকারী পান না। এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসেন। তাদের শিক্ষার খরচ মেটাতে জাবিতে কোনো তহবিলের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া কঠিন।

ভেবে দেখুন তো- বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বইয়ের কোনো কর্নার নেই। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি জাবি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টি ফুটে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আশ্চর্যজনকভাবে পিছিয়ে আছে। সুতরাং এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিক্ষার্থীরাও কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন তাও কল্পনা করা কঠিন নয়!

প্রশ্ন হলো, প্রয়োজনীয় সব ধরনের নীতি কাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো প্রতিবন্ধীবান্ধব উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি? বাংলাদেশ ২০০৭ সালে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশন (সিআরপিডি) সই করে এবং ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে। আইন অনুসারে, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই প্রতিবন্ধীবান্ধব হতে হবে। এরপরও, আমরা প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে তাদের সমস্যায় পড়তে দেখি।

হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য একাডেমিক ভবন বা আবাসিক হলে কোনো র‌্যাম্প (হুইলচেয়ার উঠানামার জন্য ঢালু জায়গা) না থাকায় জাবি শিক্ষার্থীরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশের অন্যতম নাম করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা হলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা ভালোভাবেই অনুমান করা যায়।

আমরা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করছি। এই শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকা উচিত।

সব বিভাগ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অবশ্যই প্রতিবন্ধীদের উপযোগী পাঠ উপকরণ রাখতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে অবশ্যই স্ক্রাইব বা সহকারী নিযুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী র‌্যাম্প ও উপযুক্ত টয়লেট সুবিধা থাকতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ শিক্ষা সহজ করতে এসব পরিবর্তন অপরিহার্য।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

1h ago