টিকা নিবন্ধনে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নেই

সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে করোনা টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারলে সেখানে সশরীরে ক্লাস শুরু করা যাবে।  আমরা এই সিদ্ধান্তটির যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দিহান। এই ঘোষণার আগে ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল।

দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৬০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী এখনও ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেনি। বর্তমানে ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারে। কিন্তু যাদের এনআইডি কার্ড নেই, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানিয়েছে তারা ওয়েবসাইটে একটি লিংক তৈরি করবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের তালিকা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর তারা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে। গত মঙ্গলবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিবন্ধনের পর শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন।

তবে আগস্টে এবং এ মাসের শুরুর দিকে পরিচালিত (সিটি করপোরেশনের) বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি চলার সময়ে যে অব্যবস্থাপনা, এবং গোলযোগ আমরা দেখেছি, তা আমাদের থমকে দিয়েছে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও টিকাদান কর্মসূচিতেও একই ধরনের গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।

জাতীয় পরিচয়পত্র থাকুক বা না থাকুক, যদি সব শিক্ষার্থী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করে ক্লাসে যোগদান করে, তাহলে তা কীভাবে স্বল্প মেয়াদে শ্রেণিকক্ষে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাচ্ছে? বস্তুত, যদি নিবন্ধনের পরিকল্পনা আশানুরূপ ফল দেয়, তবুও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময় শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ভ্যাকসিন পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে; প্রথম ডোজ পেতে হয়তো তাদেরকে আরও বেশ কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ পেতে অন্তত ১ মাস সময় লাগবে। যদি সারা দেশের ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী টিকাদান প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না করেই সশরীরে ক্লাস করা শুরু করে, তাহলে সেটি একটি আশংকাজনক পরিস্থিতির উদ্রেক করতে পারে। এতে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাবে? যখন তাদের টিকা নেওয়ার সময় আসবে, আমরা কি আবারও আগের দুটি বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির মতো ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখতে পাব? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখনও প্রথম ডোজ পাননি এরকম ২ কোটি ৩ লাখ মানুষের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন ডোজ কি আমাদের হাতে আছে?

আমরা অবশ্যই চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুক, কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে সেটি যেন ঝামেলাপূর্ণ না হয় এবং তাতে যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের আরেকটি ঢেউয়ের সৃষ্টি না হয়। আমরা আশা করি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যথেষ্ট পরিমাণ টিকার ডোজ মজুদ থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত। আমরা একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদানের উদ্যোগ আরও পরিকল্পিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে। এটি নিশ্চিত না করা হলে এই অত্যাবশ্যক উদ্যোগটি আরও স্বস্তি এনে দেয়ার পরিবর্তে শুধু ঝামেলাই তৈরি করবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Jucsu election set for July 31 after 33-year gap

The first election to the Jahangirnagar University Central Students' Union (Jucsu) in 33 years will be held on July 31

44m ago