ডিজিটাল শিক্ষার আগে প্রয়োজন সবার ডিজিটালে প্রবেশাধিকার

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নতুন ডিজিটাল কন্টেন্ট কেনার সরকারি উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এগুলো টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
রেকর্ডকৃত ভিডিও লেকচারগুলোতে ইনফোগ্রাফিক এবং স্লাইড শোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের সহজেই বুঝতে সাহায্য করবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মতে, এই প্রকল্পের বৃহত্তর উদ্দেশ্য হলো মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধের ফলে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা। প্রায় ১৭ মাস যাবত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কোভিড সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান অবস্থার মধ্যে শিগগির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি ছোট কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ।
বরাবরের মতোই এই উদ্যোগের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো যথাযথ বাস্তবায়ন। তবে একটি বিস্ময়কর বিষয় হবে, যদি এটি দ্রুত না হয়। আমাদের তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয়, দেশে বিদ্যমান ডিজিটাল বিভাজনের কারণে এটি কতটা সার্থক হবে। এটা অনেকের জানা যে, শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম সফল হয়েছে। তারা যতটুকুই করেছে, গ্রামীণ ও নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে তা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। এর ফলে বিশেষ ভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এই পর্যায়কে ইউনেস্কো 'একটি প্রজন্মের বিপর্যয়' বলে উল্লেখ করেছে। মে মাসে প্রকাশিত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ন্যূনতম ৩০ লাখ ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থী এবং ২০ লাখ ৫০ হাজার মাধ্যমিক শিক্ষার্থী শিক্ষার ঝুঁকিতে আছে। জরিপে ক্ষতির কারণ হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী হয়তো পড়াশোনা করছে না অথবা পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অনেকে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে এবং অনেককেই জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থার ভবিষ্যৎ প্রভাব কল্পনা করা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। শিক্ষার নতুন বিষয়বস্তু প্রবর্তন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর সুবিধা সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের ডিজিটাল প্রবেশাধিকার আছে শুধুমাত্র তাদের জন্যই যেন এই সুবিধাগুলো না হয়। তেমন হলে নিঃসন্দেহে এটি সমাজে সুবিধা বঞ্চিত এবং সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভাজন আরও বাড়িয়ে দেবে। দুর্ভাগ্যবশত, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বছর জুড়ে শিক্ষার ধারাবাহিকতার জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা স্কুল পুনরায় খোলার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচী দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। অথচ, বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সেটি অপরিহার্য। আমরা সরকারকে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা যদি শিক্ষার এই উদ্যোগের সফলতা দেখতে চাই তাহলে এখন থেকেই ডিজিটাল বিভাজন চিরস্থায়ীভাবে দূর করতে হব।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী।
Comments