‘প্রাচ্যের রানি’ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কী

কর্ণফুলী নদীর তীরে পাহাড়, সমতল আর দীর্ঘ সাগর উপকূল নিয়ে নয়নাভিরাম চট্টগ্রামের রয়েছে 'প্রাচ্যের রানি'র খ্যাতি। এক উর্দুভাষি কবি চট্টগ্রামকে বলেছিলেন 'বেহেশতের টুকরা'। এতো গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। প্রাচীনকাল থেকেই এই বন্দরের আছে অর্থনৈতিক ঐতিহ্য।

কালের পরিক্রমায় এটি এমন এক পোতাশ্রয় যেখানে নানা ধর্ম-বর্ণের ব্যবসায়ীরা আসতেন রেশম ও মশলা নিয়ে। তারা দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পালতোলা জাহাজে চড়ে। এক সময় এই পোতাশ্রয়কে কেন্দ্র করে বঙ্গোপসাগরের নোনাজলে ভাসতো চীনাদের জাঙ্ক, আরবদের ঢো ও পর্তুগিজদের ক্যারাক।

প্রাচীনকালের অন্যতম বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি ছিল নানা ভাষি ব্যবসায়ী, অভিযাত্রী ও ভাগ্য-সন্ধানীদের আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল।

কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের জন্য চট্টগ্রামকে গণ্য করা হতো প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় হিসেবে। এ পথ ধরেই বণিক-সওদাগররা তাদের পণ্য পাঠিয়ে দিতেন বিস্তীর্ণ সমভূমির লোকালয়গুলোয়।

প্রাচীন সামুদ্রিক 'রেশমপথ'র একটি বিরতিস্থল ছিল চট্টগ্রাম। স্থলপথে আসা পণ্যও এখান থেকে সাগরপথে পাঠানো হতো দূরের দেশে।

খ্রিষ্ট্রীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর দিকে গ্রেকো-রোমান ভূগোলবিদ ক্লডিয়াস টলেমি তার বিশ্ব মানচিত্রে চট্টগ্রামের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। তিনি একে পূর্ব গোলার্ধের অন্যতম সেরা বন্দর হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে নাবিকরা এখানে নোঙর ফেলে বঙ্গোপসাগরকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। কেননা, পশ্চিম থেকে পূবে আসার পথে চট্টগ্রামকে স্পর্শ করতে হয়।

পাঁচ শতাব্দী পর চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং এটিকে 'মায়াভরা জল থেকে বেরিয়ে আসা মায়াবি সৌন্দর্য' হিসেবে বর্ণনা দিয়েছিলেন। রাউটলেজের ঐতিহাসিক স্থানের আন্তর্জাতিক অভিধানে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক পরে, ভেনিসের মার্কো পোলোও চট্টগ্রাম বন্দরের সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

বিদেশি শক্তির বিজয়াভিযান ও ঔপনিবেশিক দিনগুলোতেও চট্টগ্রাম বন্দর সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। নবম শতাব্দীতে শুরু হওয়া আরব বণিকদের আধিপত্য ১৫০০ শতাব্দীতে পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তারা বন্দরটির নাম দেয় 'পোর্তো গ্র্যান্ডে দে বেঙ্গালা'।

শিল্পের বিকাশ

বন্দরের কল্যাণে প্রাচীনকাল থেকেই চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য জমে ওঠে। বিস্তৃর্ণ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগ থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলটি রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন বর্তমানে চা উৎপাদনে সিলেটের আধিপত্য থাকলেও বাংলাদেশে চা উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৮৪৩ সালে। চট্টগ্রামের একটি পাহাড়ি এলাকায়।

এ ছাড়াও, ১৯৪৯ সালে দেশের চা নিলাম কেন্দ্র চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৫২ সালে দেশের ইস্পাত শিল্প এই অঞ্চলের নাসিরাবাদে গড়ে উঠেছিল।

১৯৬৮ সালে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে, এটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সহায়ক প্রতিষ্ঠান। এর সদরদপ্তরও এই বিভাগে অবস্থিত। ইআরএলের পরিশোধন ক্ষমতা দেড় মিলিয়ন টন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড ও বহুজাতিক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড বন্দরের কাছে জেটি সুবিধা নিয়ে চলমান আছে।

দ্রুত দৃশ্যপট পাল্টে চলে আসা যাক স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে দেশের প্রথম তৈরি পোশাক কারখানা গড়া তোলা হলে এই অঞ্চল দেশে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের প্রসার ঘটায়। এখন দেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে এই খাত থেকে।

বন্দর সুবিধার কারণে ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামের দক্ষিণ হালিশহরে গড়ে উঠে দেশের প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল।

সীতাকুণ্ড: বদলে ‍যাওয়ার গল্প

সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) পরিসংখ্যানে দেখা যায়—রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বাদে ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামে মোট চার হাজার সাতটি নিবন্ধিত কারখানা আছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কারখানা এখন সচল।

শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে—চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৬৫০টি ছোট, মাঝারি ও ভারী শিল্পকারখানা চালু আছে।

ভালো করে দেখতে হলে দেশের দক্ষিণপূর্বাংশে চট্টগ্রাম অঞ্চল ভ্রমণ করতে হবে। শিল্প বিকাশের ইতিহাসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার আছে অসাধারণ অবদান।

দেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি বন্দরনগরীতে পৌঁছানোর খানিক আগেই সীতাকুণ্ডের ওপর দিয়ে এসেছে।

মহাসড়কের সুবিধার কারণে প্রায় ৫০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ব্যস্ত শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ২০০টিরও বেশি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।

মহাসড়কের একপাশে বঙ্গোপসাগরের বালুকাময় সৈকত। এখানে আছে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজভাঙা শিল্প। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বাতিল জাহাজ এখানে এনে ভাঙা হয়।

এখানে ইস্পাত রি-রোলিং প্ল্যান্ট, ঢেউটির তৈরির কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, কাঁচ কারখানা, পাটকল, বস্ত্রকল, যানবাহন সংযোজন ইউনিট ও কনটেইনার ডিপো থেকে শুরু করে বহু রকমের কারখানা আছে।

আরও আছে আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, জিপিএইচ গ্রুপ স্টিল মিলস ও কেএসআরএমসহ প্রায় ৩০টি ইস্পাত কারখানা। দেশের মোট ইস্পাতের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ এখান থেকে পূরণ হয়।

পাঁচটি প্রধান ঢেউটিন তৈরির কারখানার মধ্যে চারটি এই উপজেলায়। দেশে ঢেউটিনের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ এখান থেকে পূরণ করা হয়। এই চার কারখানার মালিক আবুল খায়ের গ্রুপ, পিএইচপি ফ্যামিলি, কেডিএস গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ।

এসবের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে সীতাকুণ্ডের অবদান সামান্য একটু তুলে ধরা হলো।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেশের মূল শিল্পখাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রভাব অনস্বীকার্য।

দেশি ইস্পাতের 'জন্মভূমি'

১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ইস্পাত কারখানা ছিল না। সে বছর গুজরাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী পৃথকভাবে উদ্যোগ নিয়ে চট্টগ্রামে তিন-চারটি ছোট ম্যানুয়াল রড তৈরির কারখানা করেন।

অন্য কারখানাগুলো সফল না হলেও আকবরালি আফ্রিকাওয়ালার পরিবারের বিএসআরএম গ্রুপের প্রথম কারখানাটি সাফল্য পায়।

১৯৬৭ সালে এখানে দেশের প্রথম বিলেট তৈরির কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম স্টিল মিলস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৩৯ বছর পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পকারখানা গড়ার পথ প্রশস্ত হয়।

বাজার গবেষণা ও খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে প্রায় ৪২টি ইস্পাত কারখানা থাকলেও শীর্ষ চারটি চট্টগ্রামভিত্তিক। বর্তমানে তারা মোট চাহিদার প্রায় ৫৩ শতাংশ পূরণ করছে।

এই চার প্রধান ইস্পাত কারখানা হচ্ছে—বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), জিপিএইচ ইস্পাত ও কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)।

বাজার বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান বিগমিন্টের তথ্য অনুসারে—বিএসআরএম দেশের চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ, একেএস ১৪ শতাংশ, জিপিএইচ ৮ শতাংশ ও কেএসআরএমের ছয় শতাংশ পূরণ করে।

বর্তমানে দেশের ইস্পাত কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৯০ লাখ টন। চাহিদা আছে প্রায় ৭০ লাখ টন। বিগমিন্টের গবেষণায় দেখা গেছে—দেশের মোট ইস্পাত গলানোর সক্ষমতার প্রায় ৬২ শতাংশ চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানাগুলোর।

বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্দর সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম শুধু ইস্পাত শিল্পের জন্য নয়, সব ভারী শিল্পের জন্য উপযুক্ত জায়গা।'

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু ইস্পাত শিল্প কাঁচামালের জন্য আমদানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, তাই বন্দরের যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকা গেলে পরিবহন খরচ কমে যায়।'

'যদি ঢাকার মতো অন্য কোথাও কারখানা করা হয় তাহলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত কাঁচামাল আনতে হবে। এরপর পণ্য বিক্রির জন্য আবার বন্দরে আনতে হবে। এতে পরিবহন খরচ বেশি হয়ে যায়।'

ঢেউটিন শিল্পের 'স্বর্গ'

১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চট্টগ্রাম স্টিল মিল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। তা হলো— ঘর ও কারখানার ছাদের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ঢেউটিন উত্পাদন।

তবে এই কারখানাটি দেশের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারেনি।

তাই আশির দশকের মাঝামাঝি বেসরকারি খাত ঢেউটিন উৎপাদনে এগিয়ে আসে। চট্টগ্রামের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করে ঢেউটিন উৎপাদন শুরু করে।

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের পাঁচ শিল্পগোষ্ঠী—আবুল খায়ের, পিএইচপি, টিকে, কেডিএস ও এস আলম গ্রুপ ঢেউটিন উৎপাদনের কাঁচামাল তৈরির জন্য বড় কারখানা করে।

বর্তমানে এই পাঁচ কারখানা ঢেউটিন বাজারের ৯৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই কারখানাগুলো আরও টেকসই ও ব্যবহার উপযোগী পণ্য উত্পাদনে বিনিয়োগ করেছে।

জাহাজ নির্মাণে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

দেশে প্রায় ২০০ নিবন্ধিত জাহাজ তৈরির ইয়ার্ড সক্রিয় আছে। এর বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জে।

তবে এগুলোর বেশিরভাগই দেশের ভেতরে পণ্য ও যাত্রী বহনে তৈরি করা হয়।

বিগত ২৫ বছরে অন্তত ২০টি শিপইয়ার্ড আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এগুলোয় এখন আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ তৈরি হচ্ছে।

এই ২০ শিপইয়ার্ডের মধ্যে দুটি চট্টগ্রামে। একটি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান দুইটি ২০০৭ সাল থেকে মোট ৪৪টি সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি ও রপ্তানি করে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

এই বিশেষ খাতে চট্টগ্রামের অবদান ঢাকার তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত রপ্তানি হওয়া ৪৪টি জাহাজের মধ্যে ৩৪টিই ওয়েস্টার্ন মেরিনের।

১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল করা হয়। তবে ৪৫৩ একর জমি থাকলেও শুরুতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল গুটিকয়েক।

এরপর গত ৪২ বছরে কারখানার সংখ্যা হয়েছে ১৪৪টি। এর মধ্যে ৭৮টি তৈরি পোশাক কারখানা।

এই শিল্পাঞ্চলের ৫০১টি প্লট এর সব কটি প্রায় ১৫ বছর আগে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আর প্লট বাড়ানোর সুযোগ এই শিল্পাঞ্চলে নেই। তাই সুউচ্চ ভবন তৈরির মাধ্যমে কারখানাগুলো এখন বড় হচ্ছে ।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের কারখানাগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সবচেয়ে বড় বেসরকারি মালিকানাধীন কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের সহায়ক প্রতিষ্ঠান কেইপিজেডে বর্তমানে ৪৮টি কারখানা আছে। এগুলোর বেশিরভাগের প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব।

বর্তমানে, কেইপিজেডের কারখানাগুলো প্রতি বছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।

২০০৬ সালে কর্ণফুলী ইপিজেড নামে আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল করা হয়। বর্তমানে সেখানে ২৩টি পোশাক কারখানাসহ ৪৮টি শিল্প কারখানা আছে। এখানে ৭৭ হাজারের বেশি কর্মী আছে।

শুধু নামেই 'বাণিজ্যিক রাজধানী'

বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারংবার চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব দেশে-বিদেশে তুলে ধরছেন। এই বন্দরের মাধ্যমে নিজ দেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রভূত উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রামকে 'বাণিজ্যিক রাজধানী' বলা হয়। যদিও অনেকে মনে করেন, শহর ও পুরো অঞ্চলটি এখনো যেসব সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তাতে এটি নিছক রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে রয়ে গেছে।

তবুও, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে। এই বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ ও মোট কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ এখান থেকে পরিচালিত হয়।

তবে, চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে তা বিকশিত হতে পারছে না। এ ছাড়াও, ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সহায়তার জন্য ঢাকার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রচুর খরচ, ক্রমবর্ধমান সরবরাহ ও পরিবহন খরচ এবং অপর্যাপ্ত পরিবহন নেটওয়ার্ক শহরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

টিকে গ্রুপের শস্য বিভাগের প্রধান সত্যজিৎ বর্মন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অত্যধিক কার্গো হ্যান্ডলিং ও পরিবহন খরচের কারণে খাতুনগঞ্জের খাদ্যশস্য ব্যবসার প্রায় ৮৫ শতাংশ ঢাকায় সরে গেছে।'

গুদাম পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কার্গো পরিবহন অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার কারণেও এর প্রভাব পড়েছে।

চট্টগ্রামের পূর্ণ সম্ভাবনা দেখতে হলে সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

তবুও, অতীতের সব গৌরব ও বর্তমান সম্ভাবনার জন্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ এখন অবকাঠামোগত বাধা ও নীতিগত অবহেলা কাটিয়ে ওঠার ওপর 

Comments

The Daily Star  | English

City services to stop unless Ishraque made mayor tomorrow: unions

Union leaders threaten to suspend services, including waste and power, if demands unmet by 10 am

44m ago