ঢাবি ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বিলম্ব কেন?

আমরা এটা জেনে অত্যন্ত হতাশ যে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ৪ বছর আগে অস্থায়ী বরাদ্দপত্রের মাধ্যমে পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) অন্যান্য ৮৩টি সংস্থাকে (সামাজিক অবকাঠামো, বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও ইনস্টিটিউট) জমি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

আগে থেকেই থাকা আইনি জটিলতা ও হাইকোর্টের নির্দেশনার বিরুদ্ধে গিয়ে পূর্বাচলে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫২ একর জমি বরাদ্দ দেয় রাজউক। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় (বর্তমানে ঢাবিতে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী, ১ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষক, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট ও ৫৬টি রিসার্চ সেন্টার এবং ব্যুরো রয়েছে) ১৯৯০ সালের পর থেকে এর অবকাঠামো সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েকবার সরকার পরিবর্তন ও উল্লিখিত আইনি জটিলতার কারণে এ পরিকল্পনা থমকে যায়।

এরচেয়ে বেশি হতাশার বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের অনেক জায়গা (প্রায় ৫৭ একর) গত কয়েক দশক ধরে, অর্থাৎ ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের হাতে হারিয়ে গেছে বলে জানা যায়। বছরের পর বছর ধরে এ বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও গত ৮৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় কোনো সরকারই দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে।

অবাক না হয়ে পারা যায় না! এ কারণেই কী গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংস্কারের নামে একাধিক বহুতল ভবন সম্বলিত মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে এটা বোঝা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন ঐতিহাসিক ক্যাম্পাস ও এর অবকাঠামোতে এত বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে। যাই হোক, বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি তার এই মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবায়ন করে তাহলে এর ইতিহাস সংরক্ষণ করা ও ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।

সুতরাং, হাইকোর্টের নির্দেশনার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৮৩ সংস্থাকে জমি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য রাজউককে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারকে অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থী ও অনুষদগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। আমরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিগুলো পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করার জন্য—যা বহু বছর ধরে বেদখল হয়ে গেছে। তাহলে ক্যাম্পাসের বিদ্যমান কাঠামো এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে সমাধান করা যাবে।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

6h ago