সংসদীয় কমিটির একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত

কক্সবাজারের সংরক্ষিত বন ও পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকায় ৭০০ একর জায়গাজুড়ে সিভিল সার্ভিস একাডেমি স্থাপনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর আপত্তি জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আমরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।
সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের মতে, সরকার যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করছে, সেখানে সরকারের একটি বিভাগ সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।
এর আগেও আমরা এই কলামে বিষয়টি উল্লেখ করেছি, ঘটনাটা কীভাবে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে এবং বেসরকারি পর্যায়েও এই উদাহরণ অনুসরণের পথ খুলে যাবে।
২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরি ড্রাইভের কাছে ৭০০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন একাডেমি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্র চেয়েছিল।
কয়েকটি সূত্রের মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে প্রকল্পটি দ্রুত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে জমি ব্যবহার করতে চেয়েছিল সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস সেই জমির ধরন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতো না। জানলে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিত না।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় ওই অঞ্চলের ১০০ একর জমিতে সামাজিক বনায়ন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সেটি পাহাড়ি এলাকা এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল, এটা জানার পর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সরকারকে প্রকল্পটি বন্ধ করতে বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করে।
এটা স্পষ্ট যে, প্রকল্পটি সেখানে করা হলে ওই এলাকার পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রোহিঙ্গাদের আসার কারণে ইতোমধ্যে এলাকাটি মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে, যার ফলে দক্ষিণ কক্সবাজারের প্রায় ছয় হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। আরও বেশি বনাঞ্চল ধ্বংস করা আমাদের পরিবেশের সক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
অতএব, প্রকল্পটি বাতিলের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি সংসদীয় কমিটির আহ্বানকে আমরা সমর্থন করি। এ ছাড়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া জমির বরাদ্দ ফেরত নেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে আমরা আহ্বান জানাতে পারি। সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আমরা আশা করতে পারি, প্রকল্পটি বন্ধ হবে এবং ভাবিষ্যতেও সেখানে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হবে না।
Comments