হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ নেই নিম্নআয়ের মানুষের

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় দেশের মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষকে জীবনমানের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গতকাল রোববার এই দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তাদের সংগ্রাম ও কষ্টের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সীমিত আয় দিয়ে সব চাহিদা পূরণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে অনেক পরিবারের খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর খাবার বাদ পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার আরোপিত লকডাউনের সময় অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অস্থায়ীভাবে কাজ পেলেও, অনেকে এখনো বেকার আছেন বা রোজগারের স্থায়ী কোনো সমাধান করতে পারেননি। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, পরিবহন ভাড়া ও নাগরিক সেবার মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে। অনেকের কাঁধেই এখন বিশাল ঋণের বোঝা। ঋণ শোধ করতে পারছেন না অনেকেই। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে অনেকের জন্য।
মহামারির অর্থনৈতিক ধকল কাটিয়ে উঠতে সরকারের কিছু নীতিমালা বা কর্মকৌশল প্রণয়ন করে তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, যেমন: ভোজ্য তেল, মাছ, গরুর মাংস, সবজির দাম বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বরে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় শুধু পরিবহন ভাড়া ও কৃষি উৎপাদন খরচই বেড়ে যায়নি, বরং তা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। এখন সরকার আবার পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নাগরিক পরিষেবার দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে, তা নিম্ন ও মধ্যমআয়ের লোকদের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, ভোজ্য তেলসহ যেসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করা হয়, বিশ্ব বাজারের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানো উচিত নয়। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দিয়েছেন। এখন সরকার যদি মানুষের রোজগার বন্ধ হওয়া ঠেকাতে না পারে এবং প্রশাসনিক সমস্যা, সিস্টেম লসের সমাধান না করতে পারে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি তুলে নেয় বা কমিয়ে দেয়, তবে শেষ পর্যন্ত এ বাড়তি বোঝা ভোক্তাদের ওপর গিয়েই পড়বে।
মহামারি চলাকালে নিম্নআয়ের অনেকেই দরিদ্র হয়ে গেছেন বলে বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্য বহির্ভূত অন্যান্য জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এখনই ঠেকানো না গেলে, তারা দারিদ্রসীমার আরও নিচে চলে যাবেন। তাই আমরা মনে করি, সরকারের উচিত সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাদের সমস্যা যেন না বাড়ে, এমন নীতি প্রণয়ন করা।
Comments