ঈদের পর বিধি-নিষেধের বাইরে থাকতে পারে পোশাক কারখানা

ঈদের পর লকডাউনের সময় পোশাক কারখানাগুলো খোলা রাখার কথা বিবেচনা করছে সরকার।
প্রতীকী ছবি

ঈদের পর লকডাউনের সময় পোশাক কারখানাগুলো খোলা রাখার কথা বিবেচনা করছে সরকার।

দেশের বৃহত্তর রপ্তানি আয়ের এই খাতটি যেন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে— সেই উদ্দেশ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

২৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের লকডাউনে কাজ বন্ধ রাখা হলে রপ্তানিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন গার্মেন্ট মালিকরা। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ পরিকল্পনার কথা জানান।

উদ্যোক্তারা বলেন, পোশাক উৎপাদকদের জন্য জুলাই-আগস্ট মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় পশ্চিমা বাজারে শীত ও বড়দিনের জন্য বিক্রি বেড়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা মোট পোশাকের ৪০ শতাংশই এ দুই মাসে রপ্তানি করা হয়।

কিন্তু, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সরকার গত ১৩ জুলাই যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেখানে রয়েছে পোশাক কারখানাগুলোও।

গতকাল বুধবার এক জরুরি সভার পর টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক নেতারা সরকারের কাছে লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানান। তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়তে হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কারখানা খোলা রাখার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনে পোশাক কারখানার কাজ চলমান রাখার উপায় খুঁজতে আমি শিগগির সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করব।’

ঈদের ছুটি ও লকডাউন মিলিয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ কারখানা বন্ধ থাকার অর্থ দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এ সময় কমিয়ে আনা হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

‘আমরা কিছু বিকল্পের কথাও ভাবছি, যেন মহামারিকালে জীবন ও জীবিকা—দুটোই রক্ষা করা যায়। যেমন গার্মেন্ট খাতের জন্য লকডাউনের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ খুব কম এবং তাদের জন্য পরীক্ষা ও মেডিকেল সুবিধাও আছে’, যোগ করেন তিনি।

শীতের জন্য রপ্তানি এবং পরবর্তী গ্রীষ্মের জন্য অর্ডার বুকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, ‘এমনকি মহামারিকালেও বাংলাদেশে প্রচুর ওয়ার্ক অর্ডার আসছে। ফলে গার্মেন্ট ব্যবসার জন্য একটা সুযোগও তৈরি হয়েছে। সময়মতো ওয়ার্ক অর্ডার সরবরাহ করে এ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত আমাদের।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার ভোজ্য তেল, চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কারখানাও খোলা রাখার কথা বিবেচনা করছে।

গতকাল প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপি সভার পর বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান জানান, লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়ে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেবেন।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকলে আমরা বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হবো। এখন যেহেতু উৎপাদন চলছে, তখনও আমরা কারখানা খোলা রাখতে চাই।’ 

এক বিবৃতিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা। এ ছাড়া, এফবিসিসিআইকেও চিঠি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলি খোকন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে পণ্য পাঠিয়েছে এবং ক্রেতাদের সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে।’

বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সোহেল বলেন, ‘লকডাউন চলাকালীন কারখানা বন্ধ থাকলে, ব্যয়বহুল এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে হবে পোশাক সরবরাহকারীদের। ফলে অনেকের ওপরই প্রভাব পড়বে।’ 

তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে এক কেজি পণ্য পাঠাতে দেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের চার দশমিক ৩০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। আন্তর্জাতিক রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলো যদি নির্ধারিত সময়ে পণ্য হাতে চায়, তবে এ খরচ আরও বাড়বে।

‘মহামারির মধ্যে কোনো কারখানা মালিকেরই ব্যয়বহুল এ বিমান ভাড়া দেওয়ার সক্ষমতা নেই। ইতোমধ্যেই  মহামারির কারণে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়েছে’, শাহাদাত হোসেন উল্লেখ করেন। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল কাদের খান বলেন, পোশাক কারখানা খোলা না রাখলে এক্সেসরিজ ব্যবসাও চলতে পারবে না। 

তিনি বলেন, ‘গার্মেন্ট উৎপাদকরা পিক সিজনে কাজ চালাতে না পারলে আমরা পেমেন্ট পাব না।’

সভাটি বিজিএমইএর গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিরা এবং টেরি টাওয়েল ও গার্মেন্ট এক্সেসরিজ খাতের নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Public medical colleges: 86 doctors, 136 students punished since August 5

Over the last two months, at least 86 physicians and 136 students in eight public medical colleges and hospitals across the country have faced different punitive actions on various allegations, including “taking a stance against” the quota reform movement.

5h ago