কোম্পানি নিবন্ধনে ভাটার টান

বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে নতুন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪৮০টিতে দাঁড়িয়েছে।

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও কোম্পানি নিবন্ধনের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৮২৬টিতে উন্নীত হয়েছিল।

আরজেএসসি পরিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র কার্যালয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোম্পানি ও অন্যন্য প্রতিষ্ঠান গঠনের সুবিধা দেয় এবং এর মালিকানা সম্পর্কিত সব নথিপত্র সংরক্ষণ করে।

এই পরিদপ্তর বিভিন্ন পাবলিক কোম্পানি, প্রাইভেট কোম্পানি, বিদেশি কোম্পানি, বাণিজ্য সংগঠন, সমিতি ও অংশীদারী সংস্থার নিবন্ধন প্রদানের পাশাপাশি প্রযোজ্য আইন অনুসারে তা পরিচালনা নিশ্চিত করে।

আরজেএসসির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উদ্যোক্তারা ১০ হাজার ৮১৭টি কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছেন, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ১২৫টি।

একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২৫৪টি সমিতির নিবন্ধন হয়েছে আরজেআরসিতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৩১৭টি।

এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে নিবন্ধন নেওয়া অংশীদারী সংস্থার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬৮টিতে। এর আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৫৯টি।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অধিকতর সহজীকরণের জন্য কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রায় ১ বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২৪টি এক ব্যক্তির কোম্পানি নিবন্ধন দিয়েছে আরজেআরসি, যা ওয়ান পারসন কোম্পানি বা ওপিসি হিসেবেও পরিচিত।

আরজেএসসি পরিদপ্তরের নিবন্ধক শেখ শোয়েবুল আলমের ধারণা, বিদ্যমান বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিস্থিতির বিবেচনায় নতুন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, 'কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে যে গতি আমরা অর্জন করেছি, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।'

প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ও ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হন, আরজেএসসি সেগুলো সহজীকরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে শোয়েবুল আলম জানান, এ সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা এখন অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে।

আরজেএসসি বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৮টি কোম্পানির নিবন্ধন দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ৩ হাজার ৬৩১টি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬৪টি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, ১ হাজার ১৩টি বিদেশি কোম্পানির লিয়াজোঁ অফিস, ৫৩ হাজার ৬০০টি অংশীদারী সংস্থা, ১ হাজার ১৫৯টি বাণিজ্য সংস্থা ও ১৫ হাজার ৫০৭টি সমিতি।

২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি রেকর্ড ২৯৬ কোটি টাকা আয় করেছে। এর আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরজেসির আয় ছিল ২১৫ কোটি টাকা।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজের বক্তব্য, উদ্যোক্তারা সংকটের সময় নতুন ব্যবসা খুলতে চান না। তিনি বলেন, 'কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর অর্থনীতি পুনরায় সচল হয়েছে। কিন্তু মহামারি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এরমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।'

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য এ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তা আছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের অনানুষ্ঠানিক ব্যবসাগুলোকে আনুষ্ঠানিক করার জন্য উৎসাহিত করা দরকার।

তিনি বলেন, 'আমরা যদি নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে না পারি, তাহলে আমরা অর্থনীতির ভিত্তি প্রসারিত করতে সক্ষম হবো না।'

অর্থনীতিবিদদের মতে, কর কর্মকর্তাদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে অনানুষ্ঠানিক ব্যবসাকে আনুষ্ঠানিক করতে চান না উদ্যোক্তারা।

তাই এই বিষয়টির ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দেন মাশরুর রিয়াজ।

এ জন্য তিনি একটি সাপ্লাই চেইন লিঙ্কেজ নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দেন, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো বড় সংস্থাগুলোর সহযোগী হয়ে নিজেদের আরও সম্প্রসারিত করতে পারে।

এ ছাড়া এক ব্যক্তির কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে শুরুর বাধাগুলোর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন রিয়াজ।

আইন অনুসারে একটি এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওপিসি প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যুনতম ২৫ লাখ টাকার মূলধন প্রয়োজন হয়। সেখানে পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো পরিশোধিত মূলধনের দরকার হয় না।

মাশরুর রিয়াজ বলেন, 'যে কারণে আমরা খুব বেশি এক ব্যক্তির কোম্পানির নিবন্ধন হতে দেখিনি।'

বিদ্যমান কোম্পানি আইনটিকে অনাধুনিক অভিহিত করার পাশাপাশি এই আইনটি নতুন কোম্পানি গঠনের জন্য এবং আরজেএসসির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট সহায়ক নয় মন্তব্য করে নতুন একটি কোম্পানি আইন প্রণয়নের দাবিও  জানান তিনি।

বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা কোম্পানি আইনে কিছু ছোটখাট সংশোধনী এনেছি। কিন্তু আমাদের একটি আধুনিক কোম্পানি আইন প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'আরজেএসসির উচিত তার ডিজিটালাইজেশন প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করা এবং নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা।'

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

8h ago