নগরকৃষি: যোগায় পুষ্টি, রক্ষা করে পরিবেশ

বাংলাদেশের শহরগুলোর অর্থনীতি, পরিবেশ ও নগর-স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে নগরকৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে অভিমত দিয়েছেন একটি সেমিনারে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এটি নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট দারিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা হ্রাস করে, নগরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং পরিবেশ রক্ষা করে।
এর পাশাপাশি এই ধরনের কৃষি থেকে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো প্রতিদিন তাজা ও পুষ্টিকর ফল এবং শাকসবজির যোগান পাওয়ায় তা থেকে তাদের ভিটামিন, খনিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর কনভেনশন হলে শহর এলাকায় খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তায় নগরকৃষির ভূমিকার ওপর এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, প্ল্যাটফর্ম অব কমিউনিটি অ্যাকশন অ্যান্ড আর্কিটেকচার, প্রশিকা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের আওতায় রাজধানীর ৪৪০ জনকে তাদের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।
এসব প্রশিক্ষণার্থীদের প্রায় সবাই নারী।
এ বিষয়ে ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের প্রধান কারিগরি পরামর্শক জন টেইলর বলেন, 'কমিউনিটির যাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি, নগর কৃষির ক্ষেত্রে তাদের বড় সাফল্য আছে। সেইসঙ্গে এর মাধ্যমে ঢাকাজুড়ে আরও অনেক দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করার সম্ভাবনা আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এর মাধ্যমে কেবল দরিদ্র পরিবারগুলোর পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থানই হয় না, উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে তারা অর্থ উপার্জনও করতে পারে। এর বাইরে নগরকৃষি থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি তা সামাজিক বন্ধনকেও সুদৃঢ় করে।'
এ বিষয়ে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে নগরকৃষির এই বাস্তবতা প্রায়শ কৃষি নীতি ও নগর পরিকল্পনায় বিবেচনায় রাখা হয় না।
নগরকৃষির টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য প্রথম পদক্ষেপ হলো নগর উন্নয়নে এর ইতিবাচক ভূমিকার সরকারি স্বীকৃতি, বিশেষ করে দরিদ্র নাগরিকদের পুষ্টি জীবিকার ক্ষেত্রে।
২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের আয়ের অর্ধেক পর্যন্ত খাবারের জন্য ব্যয় করে।
কোভিড-১৯ মহামারি এই সমস্যাগুলোকে আরও বেশি প্রকট করে তুলেছে এবং ক্ষুধা বাড়ছে। নগর দরিদ্রদের অনেকের জন্য খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব ও ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের উপ-প্রকল্প পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, ভারতের ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটসের দীপা জোসি, কো ক্রিয়েশন আর্কিটেক্টসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার হাসিবুল কবির এবং জিএআইএন'র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রুবাবা খন্দকার।
অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments