২০২১ সালে বিকাশের লোকসান প্রায় ১২৩ কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালে মোবাইল আর্থিক সেবা দাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেডের নিট লোকসান আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

২০২১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। কোম্পানিটি বলছে, বিকাশের আয় ২১ শতাংশ বাড়লেও প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ এবং সেন্ড মানিতে চার্জ কমিয়ে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির খরচও অনেক বেড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিকাশ ২০২১ সালে ১২৩ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এর আগের বছর, ২০২০ সালে বিকাশের লোকসান ছিল ৬৭ কোটি টাকা।

এই নিয়ে টানা ৩ বছর লোকসান গুনছে বিকাশ। ২০১৯ সালে এর ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনটির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজস্ব থেকে প্রতিষ্ঠানটির পরিষেবা বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং সুদ থেকে আয় কমে যাওয়ার কারণে লোকসান বেড়েছে।

২০২০ সালে, প্রতিষ্ঠানটি তার নিট আয়ের ৭২ দশমিক ৬৪ শতাংশ পরিষেবা খরচের পিছনে ব্যয় করেছে, যা ২০২১ সালে এসে দাঁড়ায় ৭৬ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ গত বছর মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর সার্ভিস চার্জ এবং 'চ্যানেল কমিশন' মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারীর জন্য খরচ বেড়েছে। অপারেটরদের সার্ভিস চার্জ ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২২৩ কোটি টাকা হয়েছে।

জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে বিকাশ লিমিটেড জানায়, বেশিরভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মতো, সামনের বছরগুলোতে নতুন গ্রাহক আনা এবং গ্রাহক ধরে রাখার ওপর মনোযোগ দিয়ে বিকাশ এক্ষেত্রে বেশি বিনিয়োগ করছে, যা একটি টেকসই ভিত্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে।

কেবল লেনদেন বাড়ানোই নয়, বিস্তৃত পরিসরের পরিষেবা প্রদানের জন্যও বিকাশ একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটি আইটি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং ডেটা বিজ্ঞানীদের মতো অতিরিক্ত জনশক্তি নিয়োগে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রক এবং অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন (সিএফটি) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়েরর ওপর জোর দিচ্ছে বলে জানায় বিকাশ।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিকাশের পরিচালনা এবং প্রশাসনিক খরচ ২১ শতাংশ বেড়ে ৫৮৫ কোটি টাকা হয়েছে।

বিকাশ মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রতিটি এজেন্ট এবং সমস্ত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়, যার সবকটিই বেশ ব্যয়বহুল।

বিকাশ বলছে, 'আমরা আশা করি আমাদের আজকের এই কৌশলগত বিনিয়োগ ডিজিটালাইজড অর্থনীতিকে আরও সতেজ করে আগামী বছরগুলোতে বাণিজ্যিক লভ্যাংশ নিয়ে আসবে।'

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আদেশ অনুযায়ী, মহামারির কারণে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সেন্ড মানির চার্জে ছাড় দিতে হয়েছে তাদের। এটি সামগ্রিক ক্ষতি বাড়িয়েছে এবং পরবর্তীতে পরিষেবার ব্যয়ও বাড়িয়েছে।

বিকাশের নিট আর্থিক আয় ৮৬ শতাংশ কমে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের ৫১ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে কম। গত বছর বিকাশ বাণিজ্যিক ব্যয় ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমিয়ে ২৩৭ কোটি টাকা করেছে।

বিকাশ উদ্ভাবন এবং স্বদেশী প্রতিভায় নিরলস বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিকাশ লিমিটেডে ব্র্যাক ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার আছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের 'মানি ইন মোশন এলএলসি'র ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, আলিপে সিঙ্গাপুর ই-কমার্সের ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং এসভিএম আইআই বিম (ডিই) এলএলসির ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শেয়ার আছে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিবৃতি অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিকাশের ই-মানি সার্কুলেশন ২৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বেশি ।

Comments