কী হবে আফগানিস্তানের নারী খেলোয়াড়দের?

তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তান দখল করার পরই দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সেই আঁচ পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত তালেবানরা বেশিরভাগ খেলাধুলোরই বিরোধী। তবে পুরুষদের ক্রিকেটের ব্যাপারে তারা ছাড় দিবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু নারীদের বেলায় কি হবে? নারীদের ঘর থেকে বের হতেই আছে তাদের নানান বিধিনিষেধ, সেখানে নারীদের খেলায় অংশ গ্রহণ অনেক দূরের ব্যাপার। এই অবস্থায় দেশটির নারী খেলোয়াড়রা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
২০১০ সালে চালু হয় আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দল। আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ পেতে যেকোনো দেশের নারী উইংসও বাধ্যতামূলক। ২০১৮ সালে গিয়ে আফগানিস্তানের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে তা রাখে ভূমিকা। এক দশক পর আফগান নারী ক্রিকেট বেশ ভালো অবস্থানেই চলে আসে। ২০২০ সালে ২৫ নারী ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় নিয়ে আসে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ আসে তাদের।
কিন্তু সাম্প্রতিক পালাবদলের পর নারী ক্রিকেটের কি হবে কেউ বলতে পারছে না। পুরুষ ক্রিকেটাররা আতঙ্ক কাটিয়ে অনুশীলন শুরু করলেও নারীদের ব্যাপারে কোন আশার খবরই মিলছে না।
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পরই আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে আইসিসি। আইসিসির নারী উইংসের সদস্য লিসা স্টালেকার জানান তাদের অনিশ্চয়তার কথা, 'অনেক উন্নয়ন হয়েছিল নারী ক্রিকেটে, কিন্তু এখন কি হবে কেউ বলতে পারছে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি উদ্বিগ্ন।'
ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও নারী দল আছে আফগানিস্তানের। ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী চলে আসছিল তাদের কার্যক্রম। নারী ফুটবলারদের অবস্থা আরও নাজুক।

আফগানিস্তান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পাপোল দেশের বাইরে থেকে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে দিয়েছেন আতঙ্কজনক খবর। তিনি জানান, নারীদের খেলাধুলা মাঠে ফেরা দূরে থাক, নারী খেলোয়াড়রা এমনকি নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলতেও চেষ্টা করছেন, 'আমি আমার সতীর্থ নারী ফুটবলারদের ফোন পাই, তারা সবাই কাঁদছে। তারা পালিয়েও যেতে পারছে না। ওখানকার পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নের মতন।'
১৯৯৬ সালে তালেবানের আগের দফা ক্ষমতা দখলের পর পাপোলের বাবা-মা তাকে নিয়ে দেশত্যাগ করেন। তালেবান উৎখাত হলে ফের দেশে ফেরেন তিনি। জড়িয়ে পড়েন নারী ফুটবলের সঙ্গে। ২০০৭ সালে নারী ফুটবল জোরালো হয় দেশটিতে। ২০১১ পর্যন্ত আফগান দলে খেলে অবসরে যান পাপোল।
বর্তমানে ডেনমার্কে বাস করা ৩৪ বছর বয়েসী সাবেক এই নারী ফুটবলার জানান, দেশে থাকতে আফগানদের অনেক হুমকি পেয়েছেন তিনি, 'আমি জাতীয় টেলিভিশনে তালেবানদের জাতীয় শ্ত্রু বলেছিলাম, তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।'
বর্তমানে আফগানিস্তানে থাকা নারী ফুটবলাররাও নিরাপদে নেই বলে জানান পাপোল, 'খেলোয়াড়রা অনেকে আমাকে ভিডিও পাঠাচ্ছে। তারা বলছে যাদের বিপক্ষে বলেছি তারা এখন অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে।'
Comments