‘উনি প্রচুর পরিমাণে বই পড়েন’, মিতালিকে নিয়ে জ্যোতি

Mithali Raj & Nigar Sultana
উইকেটের পেছনে নিগার সুলতানা জ্যোতি, ব্যাট করছেন মিতালি রাজ। ফাইল ছবি

১৯৯৯ সালের জুন মাসে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিতালি রাজের তখন কেবল দেড় বছর বয়স নিগার সুলতানা জ্যোতির। সেই জ্যোতি পরে বড় হয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে মিতালির বিপক্ষে খেলেছেন। ২৩ বছরের দীর্ঘ পথচলা থামিয়ে মিতালির অবসরে যাওয়া উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারকে জ্যোতি এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে নিয়ে তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। 

বুধবার সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার ঘোষণা দেন মিতালি। ভারতীয় এই ক্রিকেটার নারীদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নামগুলোর একটি। ওয়ানডেতে তার করা ৭ হাজার ৮০৫ রানই মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ জয়, অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও তিনি।

বৃহস্পতিবার বৃষ্টির কারণে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলা ভেস্তে যাওয়ায় হাতে কিছুটা সময় ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের। সেই ফাঁকেই জানালেন, নারীদের ক্রিকেটে আসলে মিতালির অবদান কতটা,  'মিতালি একজন কিংবদন্তি। অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের উনি অনুপ্রেরণা। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন দারুণ। ক্রিকেটটাকে তিনি ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে মনে করতেন। উনি যখনই খেলতেন, ইনিংসকে স্মরণীয় করে রাখার মতো খেলতেন। তার অবদান ভারতীয় দল কখনই ভুলতে পারবে না। তাকে দেখে শুধু ভারত না, বিশ্বের অনেক মেয়েরা ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হয়েছে।'

নিউজিল্যান্ডে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে মিতালের সঙ্গে টস করতে নেমেছিলেন জ্যোতি। সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে জানালেন, দুই জনের বয়স, ক্যারিয়ার আর ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতার কতটা ফারাক সেটা ভেবেই মজা লাগত তার, 'একটা জিনিস মজার লাগত। আমি যখন জানতে পারলাম যে উনার যখন অভিষেক হয় ১৯৯৯ সালে, তখন আমার বয়স ছিল দেড় বছর। গত বিশ্বকাপে অনেকে বলছিল ফেসবুকে যে একদলের অধিনায়কের বয়স যখন দেড় বছর তখন ওই দলের অধিনায়কের অভিষেক হয়েছিল।'

১৯৯৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিতালি। যা এখনো সবচেয়ে কম বয়েসী সেঞ্চুরির রেকর্ড হিসেবে টিকে আছে।

ব্যাটার মিতালির পাশাপাশি অধিনায়ক মিতালি ছিলেন ভীষণ সফল। সবচেয়ে বেশি ১৫৫ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ভারতকে ৮৯ ম্যাচে জিতিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে ৫ সেঞ্চুরি আর ৪৬ ফিফটিতেও রেকর্ড ৫ হাজার ৩১৯ রান আছে তার।

এমন ঋদ্ধ একজনকে কাছে পেয়ে নেতৃত্বের কৌশল জানতে চেয়েছিলেন জ্যোতি। তাকে চমকপ্রদ জবাব দেন ৩৯ পেরুনো ভারতীয় কিংবদন্তি,  'মানুষ হিসেবে উনি খুব ভালো, শান্ত মেজাজের। একবারই কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'এত ঠাণ্ডা মাথায় অধিনায়কত্ব যে করেন সেটা কীভাবে করেন?' উনি বলেছিলেন যে উনি প্রচুর পরিমাণে বই পড়েন। যেটা উনাকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।'

ম্যাচের মাঝেও মিতালিকে বই পড়তে দেখা গেছে অনেকবার। কখনো ব্যাট করতে নামার আগে প্যাড পরে বইয়ে মগ্ন থেকেছেন, এমন দৃশ্যও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। 

মেয়েদের ক্রিকেটে রেকর্ড বইয়েও প্রভাব ছিল মিতালির। আর সেটা যে অনেক নিবেদনের দল তা ভাল করে জানেন জ্যোতি,  'উনি লম্বা সময় ধরে ভারতীয় দলকে সেবা দিয়েছেন। উনি ওডিআই'র সর্বোচ্চ রানের মালিক। কতটা নিবেদন ও কতটা কঠোর পরিশ্রমী হলে সেরকম ধপে পৌঁছানো যায় তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান দেখলে বুঝতে পারব।'

Comments