'ম্যাচ ফি কি'? সেটা এখনও জানেই না মফস্বলের মেয়েরা

বর্তমানে অভিনেত্রী হিসেবে টেলিভিশন মিডিয়াতে কাজ করলেও মিশু চৌধুরীর উত্থান ছিল ক্রিকেট দিয়েই। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আজাদ স্পোর্টিং, ইন্দিরা রোড ক্লাব, সিলেট ডিভিশনের হয়ে খেলেছেন। সবমিলিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন আট বছর। কিন্তু ম্যাচ ফি নামক এই জিনিসটা খুব অল্পই পেয়েছেন তিনি। কারণ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ ফি এখনও দেওয়া হয় নাম মাত্র অঙ্কে।

২০১৩ সালে ক্রিকেট ছেড়েছেন মিশু। মাঠের খেলা ছাড়লেও স্পোর্টস প্রেজেন্টেশন করছেন তিনি। তার মানে ক্রিকেটের সঙ্গে এখনও সংশ্লিষ্ট তিনি। ভালো করেই জানেন সব খবর। দেশের ক্রিকেটের মান বদলালেও তৃণমূলের পরিস্থিতি আদতে বদলায়নি খুব একটা। ক্রিকেট খেললে যে ম্যাচ ফি পাওয়া যায় তা এখন অনেক মফস্বলের নারীরা জানে না বলে মনে করেন মিশু। সবমিলিয়ে আক্ষেপই ঝরে তার কণ্ঠে।

আজ মঙ্গলবার দিনভর যখন আলোচনা নিউজিল্যান্ডের নারী ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি নিয়ে। তখন আশায় বুক বেঁধেছেন মিশু। কারণ মেয়েদেরও ছেলে ক্রিকেটারদের সমান ম্যাচ ফি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এবার শুধু ম্যাচ ফিই নয়, নারীদের ক্রিকেটে পৃষ্ঠপোষকদের আগ্রহও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

আর প্রত্যাশাটা মিশু করতেই পারেন। কারণ নানা প্রতিবন্ধকতা ও কম সুযোগের মধ্যেও পরিসংখ্যান বলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ঢের এগিয়ে ক্রিকেটে। আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে তারাই আগে। তাও আবার এশিয়া কাপের মঞ্চে। সবমিলিয়ে নারী ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন মিশু। একই সঙ্গে ভাবনার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে খোলা এক চিঠি লিখেছেন দেশ বাসীর উদ্দেশ্যে-

'আজকে পড়ছিলাম যে নিউজিল্যান্ডে নারী এবং পুরুষ ক্রিকেট টিমের ম্যাচ ফি একই রকম ধরা হয়েছে। অর্থাৎ পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারের মধ্যে ম্যাচ ফি নিয়ে কোন বিভাজন নেই। আবার খেয়াল করে দেখবেন অন্যান্য যে দেশগুলো আছে বা আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, সাউথ আফ্রিকা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটা টিমে নারী ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি এর বিষয়ে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন।

কিছুদিন আগে প্রিমিয়ার লিগ হয়ে গেল। সেখানে যত গুলো ক্লাব অংশগ্রহণ করেছে তাদের একেক জনের চিত্র একেক রকম। কেউ বেশি টাকা পেয়েছে, কেউ বা কম। 'ম্যাচ ফি কি'? সেটা এখনও মফস্বলের মেয়েরা অনেকেই জানে না। তারা জানে শুধু একটা ব্যাপার, গ্রাম থেকে শহরে ক্রিকেট খেলতে এসেছে। সালমা জাহানারার মতো কোনো একদিন তারাও জাতীয় টিমে খেলবে। নিজেদের খেলাটাই যেন সবার সামনে তুলে ধরাই তাদের কাছে মূল প্রাপ্তি এবং লক্ষ্য।

অথচ প্রাপ্তির কথা যদি বলি, তাহলে এই মুহূর্তে জাতীয় টিমের ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে আছে। যদিও খেলার ক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারী ক্রিকেটারদের কে আমি কখনও আলাদা চোখে দেখি না। আমার কাছে তাদের নিয়ে শব্দ কেবল একটাই 'ওরা খেলোয়াড়, ওরা ক্রিকেটার'।

সেই ১৯৮০ সাল থেকে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছে। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৫ সালে তারা কলকাতার ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাথে ক্রিকেট খেলে। এরপর নানা কারণে নারীদের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে আবারও শুরু হয় এবং এখনও চলছে। যতটা আগানোর কথা ছিল তারও চেয়ে বেশি ওরা এগিয়েছে। সামাজিক বাস্তবতা কে পেছনে ফেলে পুরুষের সাথে সমান তালে তালে চলছে। আগের চেয়ে পরিবর্তন এসেছে তবে তা ২০২২ সালের বর্তমান অবস্থার জন্য সঠিক নয়।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা স্পন্সরদের কথা যদি বলি তারা কেবল পুরুষ ক্রিকেটারদের পেছনে টাকা ঢালছে। মেয়েদের ক্রিকেট খেলার বিষয়ে তাদের আগ্রহ কেন এতটা কম এ বিষয়টি একমাত্র তারাই বলতে পারবে। তবে এখন সময় এসেছে মেয়েদের ক্রিকেটে পাশে দাঁড়ানো। যতটা সম্ভব স্পন্সরশীপ দেওয়া। শুধু জাতীয় টিমের জন্য না। প্রিমিয়ার লিগ সহ মেয়েদের ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন যেগুলো লিগ হচ্ছে সেগুলো তেও এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা এজেন্সি যারা আছে তাদেরও উচিত পুরুষ ক্রিকেটারদের নিয়ে যেমন বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে তেমনিভাবে নারী ক্রিকেটারদের নিয়েও বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করা। এতে করে তারা ব্যক্তিগত ভাবে অর্থনৈতিক  স্বাবলম্বী হবে।

পাশাপাশি ফুরফুরা মেজাজে কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই আরো ভালো ভালো পারফর্মেন্স বাংলাদেশকে উপহার দিবে। নারীদের ক্রিকেটের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যাবে যখন মফস্বলের মেয়েদের কাছে তাদের নিয়ে আরো অনেক বেশি হিরোইজম তৈরি হবে। মফস্বলের মেয়েরা ক্রিকেটকে পেশাগতভাবে ভাবতে শুরু করবে। যখন দেখবে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে তখন মেয়েরা ক্রিকেটের ওপর আরও অনেক বেশি ফোকাস হবে। মেয়েদের পরিবার থেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেবার যে ভাবনা সেটিও দূর হবে। এবং সর্বোপরি নারী ক্রিকেটের একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এজন্য সবাই কে এগিয়ে আসতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

1h ago