যুব দলের বিশ্বকাপ যাত্রা এবং কিছু প্রশ্ন

bangladesh under 19
২০২২ যুব বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বয়স যতই অনুকূলে থাকুক একবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেই আর কাউকে পরে যুব দলে রাখা যাবে না- রাহুল দ্রাবিড় এমনই কড়া নিয়ম করেছিলেন ভারতে। ভারতীয় দল সেটাই অনুসরণ করে আসছে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কাপ জেতাটাও গুরুত্বপূর্ণ, তবে তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ। যুব বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল আছে কোন পথে?

মঙ্গলবার যুব এশিয়া কাপ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সেখান থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে তারা। আগেরবার দক্ষিণ আফ্রিকায় যে দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা সেই স্কোয়াডের তিনজন, এবং সেই পুলের চারজন আছেন এই দলেও।

যুব বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান ও পেসার তানজিম হাসান সাকিব। এই দুজন এই দলেরও মূল ভূমিকায়। রাকিবুলকে করা হয়েছে অধিনায়ক। পেস আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন সাকিব।

ওপেনার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল আগের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেও কোন ম্যাচ খেলা হয়নি। তিনি এবার মূল ওপেনারের ভূমিকায়। ব্যাটার মেহরব হোসেন আগের স্কোয়াডেও প্রাথমিক দলে ছিলেন। এবার মূল স্কোয়াডে আছেন।

এই দলে শুরু থেকে প্রান্তিক ও মেহরব থাকলেও রাকিবুল ও সাকিব ছিলেন না। তাদের আরেকটি যুব বিশ্বকাপ খেলার কোন কথাও ছিল না। কিন্তু গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে যুব দলের চরম ব্যর্থতার পর আচমকা আসে বদল। সিনিয়র ক্রিকেটে নিয়মিত হয়ে পড়া রাকিবুল ও সাকিবকে ডেকে আনা হয় যুব দলে। শোনা যায়, আবারও যুব দলে ফেরার ইচ্ছাও খুব একটা ছিল না তাদের।

কেন পুরনোদের ডেকে এনে আবার যুব স্কোয়াডে নেওয়া হলো জানতে চাইলে ম্যানেজার আবু এনাম মো. কাউসার দিলেন যুক্তি,  'প্রথমত আপনাকে দলের দিকে দেখতে হবে। টুর্নামেন্টে যেহেতু সুযোগ আছে তাদের খেলার, সেই সুযোগটা আমরা নিয়েছি। এখানে অভিজ্ঞতা একটা ব্যাপার, আমাদের যে কম্বিনেশন, তাতে খুবই তরুণ একটি দল।'

'আমাদের গত বিশ্বকাপ দলের চার জন খেলোয়াড় এই দলে আছে, তার মধ্যে শুধু দুজন খেলেছে। আর যে দুজন আছে (প্রান্তিক নাবিল নওরোজ ও মেহরব হোসেন) তারা কিন্তু ম্যাচ খেলেনি। তাদের সেই অভিজ্ঞতাটা নেই। ম্যাচের আমেজ, ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যে ব্যাপারটা সেটাও নেই।'

যুব দল ব্যাপারটাই তো তরুণদের। এখানে অভিজ্ঞতার প্রশ্ন আসবে কেন? প্রায় প্রতিটি দেশের যুব স্কোয়াডেই তো আনকোরা ক্রিকেটাররা ঠাঁই পান। প্রথম বড় মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্য তোলে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকে তাদের। এতে করে বোঝা যায় একটা দেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উঠে আসার স্রোত আসলে কেমন।

প্রতিটি বিশ্বকাপে নতুন সেটআপ নিয়ে ভারতের মতো খেললে আরেকটি নিশ্চিত হয়- বয়স! অর্থাৎ অনূর্ধ্ব ১৯ বয়েসী ক্রিকেটাররাই খেলেন। বাংলাদেশে এই ব্যাপারে দেখা যায় পরিকল্পিত উদাসীনতা। তিন-চার বছর বয়স কমিয়ে ক্রিকেটারদের যুব দলে খেলিয়ে দেওয়া অনেকটা ওপেন সিক্রেট ব্যাপার।

এখানেই আসে প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রশ্নও। বর্তমান যুব দলের ক্রিকেটারদের স্কিল যতই খারাপ হোক তাদের খেলতে দিলেই তো আপনি একটি বাস্তব চিত্র পাবেন। কিন্তু পুরনোদের ডেকে এনে তাদের স্কিল আড়াল করলে সেটা কি পাওয়া সম্ভব? 

কদিন আগে ভারতে গিয়ে একটি সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। ভারত 'এ', ভারত 'বি' নামে স্বাগতিকদের যুবারা দুই দল খেলেছিলেন। তাদের অনায়াসে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন রাকিবুলরা। টুর্নামেন্টের আদল, আবহেই বোঝা গেছে ভারত মূলত দল তৈরি করার জন্যই টুর্নামেন্টটা খেলেছে। সাফল্যের চেয়ে নানা রকম নীরিক্ষায় গিয়ে সঠিক সমন্বয় খোঁজাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এই বিশ্বকাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও সেখান থেকে দুই-চারজন ক্রিকেটার যেন মূল স্রোতে সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আসতে পারেন সেটাই থাকবে তাদের মাথায়। গত যুব বিশ্বকাপ না জিতলেও যেমন রবি বিষ্ণুই, যশ্বসি জয়সাওয়ালরা আইপিএলে দেখিয়েছেন তারা কতটা তৈরি।

আর বাংলাদেশ মূলত চাইছে আরও একটি সাফল্য, যেখানে আড়াল পড়বে বাস্তবতা। যুব বিশ্বকাপে গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এসেছে বড় সাফল্য। তার আগেও বড় বড় দলকে প্রায়ই হারানোর নজির আছে বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকাতেও বাংলাদেশের তরুণদের নাম এসেছে। কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটে এসে সেই ছাপ আর থাকেনি।

২০১২ সালে যুব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন এনামুল হক বিজয়। একই যুব বিশ্বকাপে পাকিস্তান স্কোয়াডে ছিলেন বাবর আজম। বাবর এখন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। আর বিজয় বাংলাদেশ দলেরও আশেপাশে নেই।

অর্থাৎ যুব বিশ্বকাপের সাফল্য আসলে ম্যাটার করে না। ম্যাটার করে প্রক্রিয়া অনুসরণ। যুব বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেউ ঠিক পথে থাকলে সিনিয়র ক্রিকেটে হতে পারে বড় কিছু। যুব পর্যায়ে দারুণ করলেও পরে কেন বাংলাদেশের তরুণরা সেটা ধরে রাখতে পারেন না, এই কারণ তলিয়া দেখলে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার বিষয়টাই হয়ত আসবে বড় হয়ে।

বাংলাদেশ আসলে চায় চটকদার খবরে বড় ক্ষত আড়াল করে দিতে। সাময়িকভাবে সেটা বেশ কাজে দিলেও সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ক্ষতের ব্যথায় কাতর হয় পুরো কাঠামো।

বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ স্কোয়াড:

রাকিবুল হাসান (অধিনায়ক), প্রান্তিক নওরোজ নাবিল (সহ-অধিনায়ক), মাহফিজুল ইসলাম, ইফতেখার হোসেন ইফতি, এসএম মেহরব হোসেন, আইচ মোল্লা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজী মোহাম্মদ তাহজিবুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফাহিম, মোহাম্মদ মুশফিক হাসান, রিপন মণ্ডল, মোহাম্মদ আশিকুর জামান, তানজিম হাসান সাকিব ও নাইমুর রহমান নয়ন।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago