কী হতে পারে স্থগিত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের ভাগ্য

কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে ল্যাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচে। ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিট পর তা পণ্ড করে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তারা। বাধ্য হয়েই ম্যাচটি স্থগিত করে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। শেষ পর্যন্ত কি হতে পারে এ ম্যাচের ভাগ্য? নতুন করে পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে এ ম্যাচ? নাকি তিন পয়েন্ট দেওয়া হবে আর্জেন্টিনাকে?
মূলত বিষয়টা নির্ভর করছে ম্যাচ রেফারির দেওয়া প্রতিবেদনের উপর। তার প্রতিবেদনের উপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি হতে পারে এ ম্যাচের ভাগ্য।
কনমেবলের নিয়মনীতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আর্জেন্টিনার পক্ষেই যেতে পারে। কনমেবলের শৃঙ্খলাবিধির ধারা অনুযায়ী, ম্যাচ শুরু হয়ে গেলে খেলা থামিয়ে খেলায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না কোনো খেলোয়াড়কে। এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে সমাধান করতে হবে ম্যাচ শুরুর আগে কিংবা পরে। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে নয়। অন্যথায় যে দলের কারণে ম্যাচ থেমে যাবে, তার প্রতিপক্ষ দল পাবে পূর্ণ তিন পয়েন্ট।
আর্জেন্টিনা দল ব্রাজিলে তিন দিন আগে থেকেই অবস্থান করছে। অথচ খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করতে ম্যাচ শুরুর পর হাজির হয় কর্তারা। এ প্রসঙ্গে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর 'আনভিসা' দাবী করছে তাদের দেশে ঢোকার সময় কিছু বিষয় গোপন করেছেন সে চার খেলোয়াড় -অ্যাস্টন ভিলার এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া ও এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এবং টটেনহ্যাম হটস্পার্সের জিওভান্নি লো সেলসো ও ক্রিস্তিয়ান রোমেরো।
ভিসা ফর্মে সে চার খেলোয়াড় লিখেছেন ভেনেজুয়েলা থেকে ব্রাজিলে ঢুকতে যাচ্ছেন তারা। বাস্তব দৃষ্টিতে এটাই সত্য। কারণ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে এর আগে ভেনেজুয়েলাতেই ছিলেন তারা। কিন্তু এর আগে তারা ছিলেন ইংল্যান্ডে। আর করোনাভাইরাসের ব্রাজিলিয়ান নিয়ম অনুযায়ী ব্রিটেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি নেই ব্রাজিলের বাইরের লোকদের। বিশেষ ক্ষেত্রে বিষয়টিতে ছাড় দেওয়া হয়। তাও ব্রাজিলে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করতে হয় তাদের। সেই চার খেলোয়াড় ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করেননি।
মূল ঝামেলাটা এখানেই। সেক্ষেত্রে কারা ঠিক?
শেষ সিদ্ধান্তটি দিবে ফিফা। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ কনমেবলের হাতে থাকলেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ হওয়ায় এ বিষয়ে রায় জানানোর কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। সবকিছুই নির্ভর করছে ফিফার উপর। সেক্ষেত্রে কনমেবলের নিয়ম কি বহাল থাকবে কি-না তা নিয়েও থাকছে প্রশ্ন।
কি হতে পারে ফিফার সিদ্ধান্ত?
তবে ফিফা জানে, যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা, তাই সমালোচনার মুখে পড়বে। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, বাহ্যিক কোনো শক্তির কারণে যদি ম্যাচ পণ্ড হয় সেক্ষেত্রে পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্রাজিলের পক্ষে সিদ্ধান্ত যেতে পারে।
কনমেবলের অবস্থান ভিন্ন। তাদের দাবী, ব্রাজিলিয়ান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর 'আনভিসার' তৈরি বাবল নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই, খেলোয়াড়রা অবৈধ কিছু করেনি। আর এ কারণেই সে চার খেলোয়াড়দের পক্ষেই কথা বলেছিল তারা। তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই তাদের মাঠে নামিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
আর আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) নিশ্চিত যে ফিফা তাদের পূর্ণ তিন পয়েন্ট প্রদান করবে। কারণ খেলা বন্ধ করার যে কারণ তাতে তাদের কিছু করার ছিল না। সবকিছুই করেছে ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষ।
তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ)। দুঃখ প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, ম্যাচটি স্থগিত করেছে ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষ। এখানে ফেডারেশনের কেউ যুক্তও ছিল না।
শেষ পর্যন্ত তাই জটিল এক সমস্যার সিদ্ধান্ত নিতে হবে ফিফাকে।
Comments