বসুন্ধরাকে বিধ্বস্ত করে ৩১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

প্রথমার্ধে একের পর এক সুযোগ তৈরি করেও বল জালে পাঠাতে পারল না ঢাকা আবাহনী। বসুন্ধরা কিংস প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি ছড়াল পাল্টা ভীতি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ভেঙে পড়ল তাদের রক্ষণদেয়াল। আক্রমণের ধারা বজায় রেখে ১৭ মিনিটের ঝড়ে তিন গোল আদায় করে নিল আবাহনী। দুর্দান্ত জয়ে ৩১ বছর পর তারা ঘরে তুলল স্বাধীনতা কাপের শিরোপা।
শনিবার ফাইনালে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আবাহনী। বিরতির পর রাকিব হোসেন দলকে এগিয়ে দেন। এরপর জোড়া গোল করেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড দরিয়েলতন গোমেস।
স্বাধীনতা কাপের একাদশ আসরে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী। এর আগে ১৯৯০ সালে এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছিল তারা।
তিন বছর পর কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। সবশেষ ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপের শিরোপা তারা নিজেদের করে নিয়েছিল। সেবার ফাইনালে বসুন্ধরাকেই ৩-১ গোলে হারিয়েছিল তারা। কোচ মারিও লেমোসের অধীনে এটি আবাহনীর প্রথম শিরোপা।
দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে আক্রমণে এগিয়ে থাকা আবাহনী দ্বিতীয়ার্ধে হয়ে ওঠে দুর্বার। আক্রমণের ঝাপটা সামলাতে ব্যস্ত থাকা বসুন্ধরার মনোবল ভেঙে পড়ে পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোল হজমের পর। এরপর ম্যাচে ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি তারা। বরং আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে আরও এক গোল আদায় করে নেয় আবাহনী।
ষষ্ঠ মিনিটে বল জালে পাঠান আবাহনীর দরিয়েলতন। কিন্তু আগেই বেজে ওঠে অফসাইডের বাঁশি। চার মিনিট পর নুরুল ফয়সালের কাছ থেকে বল পেয়ে কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড কলিনদ্রেসের নেওয়া হেড সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
পরের মিনিটে বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দা সিলভার দূর থেকে নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ছয় মিনিট পর আবার গোলের সুযোগ তৈরি করে আবাহনী। ডি-বক্সের বাইরে থেকে কলিনদ্রেসের ফ্রি-কিক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন জিকো।
২২তম মিনিটে ফের দূরপাল্লার শটে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে হানা দেয় বসুন্ধরা। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ফরোয়ার্ড স্টোয়ান ভ্রানিয়েস ৩৫ গজ দূর থেকে যে শট নেন, তা কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান গোলরক্ষক মাহফুজ হাসান প্রিতম। দুই মিনিট পর তার ফ্রি-কিক গোলপোস্টের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়।
২৬তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন আবাহনীর অধিনায়ক রাফায়েল অগুস্তো। ইরানিয়ান ডিফেন্ডার মিলাদ শেখের ভলি থেকে ডি-বক্সের বাম দিকে ফাঁকায় বল পেয়ে যান তিনি। কিন্তু জোরে মারার পরিবর্তে তিনি যে গড়ানো শট নেন, তা সহজেই গ্লাভসবন্দি করেন জিকো। ৩৮তম মিনিটে রাফায়েলের ক্রসে দরিয়েলতনের হেড খুঁজে পায়নি জাল।
পরের মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে আবাহনীর ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রবসন। তিনি বল বাড়ান ভ্রানিয়েসকে। কিন্তু তার শট চলে যায় গোলবারের অনেক ওপর দিয়ে।
বিরতির পর ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে আবার হতাশ হতে হয় আবাহনীকে। দরিয়েলতনের পাসে কলিনদ্রেসের বাম পায়ের শট লক্ষ্যে থাকেনি। তবে ছয় মিনিট পরই এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মাতে তারা। মাঝমাঠ থেকে রাফায়েলের রক্ষণচেরা পাসে সঙ্গে লেগে থাকা বসুন্ধরার ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাতকে এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাকিব। এরপর আলতো টোকায় তিনি বল পাঠান জালে।
৬১তম মিনিটে পেনাল্টি পায় আবাহনী। রিমন হোসেন ডি-বক্সে কলিনদ্রেসকে ফেলে দিলে রেফারি বাজান স্পট-কিকের বাঁশি। সেসময় বসুন্ধরার খেলোয়াড়রা রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে মাঠে ছড়ায় উত্তেজনা। তবে দরিয়েলতন ঠিকই মাথা ঠাণ্ডা রাখেন। দুই মিনিটের ব্যবধানে পেনাল্টি থেকে তিনি পরাস্ত করেন জিকোকে।
৭১তম মিনিটে বসুন্ধরার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন স্বাধীনতা কাপের এবারের আসরে সর্বোচ্চ চার গোল করা দরিয়েলতন। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা রাফায়েলের কর্নারে মিলাদের হেডের পর বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। এরপর ছয় গজের বক্সের কাছাকাছি থেকে নিশানা ভেদ করেন ।
বাকিটা সময়ে গোল করার আরও সুযোগ পায় আবাহনী। কিন্তু জিকো দাঁড়ান বাধার দেয়াল হয়ে। আর বসুন্ধরা সুযোগ পেলেও পারেনি ব্যবধান কমাতে।
Comments