মেসির নৈপুণ্যে অবশেষে ম্যানসিটিকে হারাল পিএসজি

আগের প্রতিটি দেখায় ম্যানচেস্টার সিটির কাছে পিএসজিকে হয় হারতে হয়েছে অথবা সর্বোচ্চ ড্র। সিটিজেনদের বিপক্ষে জয় অধরাই ছিল প্যারিসের দলটির জন্য। তবে অবশেষে গেঁড়ো খুলতে পেরেছে তারা। চলতি মৌসুমেই যোগ দেওয়া লিওনেল মেসির নৈপুণ্যেই জয় পায় দলটি।

মঙ্গলবার রাতে পার্ক দি প্রিন্সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ২-০ গোলের ব্যবধানে জয় পায় পিএসজি। ম্যাচের দুই অর্ধে একটি করে গোল দেয় তারা। প্রথমার্ধে ইদ্রিসা গানা গুইয়ের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে মেসির গোলে জয় নিশ্চিত হয় দলটির।

এ নিয়ে ষষ্ঠবারের দেখায় সিটির বিপক্ষে প্রথম জয় পেল পিএসজি। আগের পাঁচ মোকাবেলায় সিটি জিতেছে তিন ম্যাচে। অপর দুটি ম্যাচ ড্র।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরাবরই মেসির প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংলিশ দলগুলো। তাদের বিপক্ষে এর আগে ৩৪টি ম্যাচ খেলে ২৬টি গোল করেছিলেন। এদিন পরিসংখ্যানটা আরও বাড়ালেন। পাশাপাশি পিএসজির হয়ে পেলেন প্রথম গোল। এর আগে নতুন ক্লাবটির হয়ে তিনটি ম্যাচ খেললেও গোলের দেখা মিলেনি তার।

তবে ম্যাচের শুরুতে স্বাগতিকদের বেশ চেপে ধরেছিল সিটিজেনরা। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলেও বল দখল বেশি ছিল তাদেরই। ৫৪ শতাংশ বল দখলে ছিল ইংলিশ দলটির। শটও করে ১৮টি। যার ৭টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে মাত্র ৬টি শটের তিনটি লক্ষ্যে রেখে দুটি গোল আদায় করে নেয় প্যারিসের ক্লাবটি।

আসরে এটাই প্রথম জয় পিএসজির। এর আগে ক্লাব ব্রুজের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও হোঁচট খেয়েছিল তারা। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট তাদের। এদিন লাইপজিগকে ১-২ গোলে হারানোয় সমান ৪ পয়েন্ট ব্রুজেরও। গোল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে আছে তারা। দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে সিটি।

এদিন ম্যাচের অষ্টম মিনিটে ইদ্রিসার গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এ গোলেও রয়েছে মেসির অবদান। তার বাড়ানো বল থেকে ডি-বক্সে নেইমারের উদ্দেশ্যে দারুণ এক কাটব্যাক করেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে বলে ঠিকভাবে সংযোগ করতে পারেননি এ ব্রাজিলিয়ান। তার শট প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে চলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো ইদ্রিসার পায়ে। জোরালো লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল হয়নি সেনেগালের এ মিডফিল্ডারের।

২৬তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় পিএসজি। দুই দফা বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে বল। প্রথমে কেভিন ডি ব্রুইনার ক্রস থেকে রহিম স্টার্লিংয়ের নেওয়া হেড বারপোস্টে প্রতিহত হয়। এরপর আলগা পেয়ে শট করেছিলেন বের্নার্দো সিলভা। কিন্তু তার শটও বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে নষ্ট হয় সে সুযোগ। তিন মিনিট পরও ডি-বক্সে সৃষ্ট জটলায় সুযোগ ছিল সিটির। তবে কর্নারের বিনিময়ে কোনো বিপদ হতে দেননি হাকিমি।

৩১তম মিনিটে জোয়াও ক্যানসেলোর শট ঝাঁপিয়ে লুফে নেন পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা। তিন মিনিট পর সিলভার দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শটও সহজেই ধরে ফেলেন এ গোলরক্ষক। এর তিন মিনিট পর রিয়াদ মাহরেজের বাড়ানো বল থেকে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন ডি ব্রুইনা। এবারও সিটিজেনদের হতাশ করেন দোনারুমা।

৩৮তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ এক সুযোগ ছিল পিএসজির। মেসির থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এন্দের এরেরাকে কাটব্যাক করেছিলেন এমবাপে। দারুণ এক শটও নিয়েছিলেন এ স্প্যানিশ তারকা। তবে দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান সিটি গোলরক্ষক এদেরসন মোয়ারেস। ছোট কর্নার থেকে দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলমুখে ভালো ক্রস করেছিলেন এমবাপে। কিন্তু অল্পের জন্য নাগাল পাননি মার্কুইনোস।

৪৩তম মিনিটে ফের অতিথিদের হতাশ করেন পিএসজি গোলরক্ষক দোনারুমা। কর্নার থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নিয়েছিলেন রুবেন দিয়াস। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান পিএসজি গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফিরতে পারতো সিটি। অল্পের জন্য বাইরে স্টার্লিংয়ের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৪তম মিনিটে আবারও অসাধারণ এক সেভ করেন দোনারুমা। ডি ব্রুইনার দারুণ এক প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেন তিনি। মাহরেজের থ্রু বল পেয়ে ডান প্রান্তে অনেকটা ফাঁকায় থেকে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন এ বেলজিয়ান। কিন্তু তার শট দারুণ দক্ষতায় পা দিয়ে ঠেকান দোনারুমা।

৬৫তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক মিস করেন নেইমার। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে ফাঁকায় থাকা নেইমারকে বল দিয়েছিলেন হাকিমি। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। শট নিতে দেরি করায় এক ডিফেন্ডার চার্জ করলে তখন তড়িঘড়ি করে শট নিয়ে বাইরে মারেন তিনি। ছয় মিনিট পর ডি ব্রুইনার দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।

৭৪তম মিনিটে পিএসজি ক্যারিয়ারের প্রথম গোল পান মেসি। পাল্টা আক্রমণ থেকে এমবাপের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিখুঁত এক শটে বল জালে পাঠান সাবেক বার্সেলোনা অধিনায়ক। গোলরক্ষক এদেরসনের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা তার ১২১তম গোল।

পাঁচ মিনিট পর তো দুর্দান্ত দোনারুমা। সিলভার ক্রস থেকে মাহরেজের নেওয়া বুদ্ধিদীপ্ত কোণাকোণি শট ঠেকান তিনি। ম্যাচের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মাহরেজের ফ্রিকিক থেকে নেওয়া দারুণ শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। শেষপর্যন্ত সিটির বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় পিএসজি।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

11h ago