মহামারি পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদে করণীয়
সম্ভবত চলমান করোনাভাইরাস মহামারির সর্বোচ্চ সংক্রমণ পর্ব অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই ঢাকাসহ করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত দেশের সব হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। শয্যার অভাবে অনেক রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে শুধু অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতির কারণেও রোগীর মৃত্যু ঘটছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প কোনো পন্থা নেই। বিগত ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা এবং বিধিনিষেধ স্বত্বেও শপিং, বিপুল সংখ্যক মানুষের স্থান পরিবর্তন মহামারি পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কয়েকদিন পর ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটে এবং ছুটি কাটাতে আবারো মানুষের ভিড় ও চলাচল বেড়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। তবে, মহামারির এই পরিস্থিতিতে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, না হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে সামনে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পশু কোরবানি ওয়াজিব আর মানুষের জীবন বাঁচানো ফরজ। পশুর হাটে মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা ও মহামারির জন্য নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অসম্ভব। এমতাবস্থায় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যই এবারের ঈদে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য বিকল্প পদ্ধতির (যেমন: অনলাইন, বিক্রেতার বাড়ি) ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অধিক সংক্রমণ প্রবণ এলাকায় পশুর হাট আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মহামারির কারণে ফরজ হজ পালন বন্ধ রাখা গেলে, পশু কোরবানিও বন্ধ রাখা যায় যুক্তিসঙ্গত কারণেই।
ঈদের ছুটিতে বড় শহর থেকে আদি বসতবাড়ি ভ্রমণ করার ঐতিহ্য প্রচলিত আছে আমাদের দেশে। এসময় গণপরিবহনে গাদাগাদি করে মানুষ চলাচল করে থাকে, যেটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। আসন্ন ঈদে জোর করে হলেও মানুষের স্থান পরিবর্তনে বাধা দিতে হবে। মহামারি চলাকালে মানুষের স্থান পরিবর্তন নিয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)।
কাজেই দেশ ও জাতির স্বার্থে এই ঈদে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের স্থান পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন।
ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
Comments