আমানত টানতে চড়া সুদ দিচ্ছে ব্যাংক

তারল্য সংকট, ব্যাংক, আমানত, ব্যাংক ঋণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, নীতি সুদহার,
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এই অবস্থায় কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের ওপর ১৩ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে, যা সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার আগের ৬ থেকে ৮ শতাংশ গড়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

এনআরবি ব্যাংক আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মেঘনা ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।

এছাড়া এনআরবিসি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক আমানতের ওপর ১১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও ইসলামী ব্যাংক ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু ব্যাংক বর্তমানে বাধ্যতামূলক তারল্য অনুপাত ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি গুরুতর সংকটে পড়া অনেক ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না।

তারা আরও বলেন, এ কারণে কিছু ব্যাংক এখন আমানতের বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এছাড়া কিছু ব্যাংক বাধ্যতামূলক ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) পূরণ করতে সমস্যায় পড়েছে। তাই তারা উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত টানতে বাধ্য হচ্ছে।

ইতোমধ্যে কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঘাটতিতে পড়েছে। তারা সিআরআর ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত ৯ শতাংশ জরিমানা দিচ্ছে।

এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করার পর আমানত, ঋণ ও বন্ডের সুদ বেড়েছে।

তা ছাড়া, ঋণের হারের ঊর্ধ্বসীমা ও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করায় ব্যাংকগুলো তাদের ইচ্ছামতো সুদহার নির্ধারণ করার সুযোগ পাচ্ছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, খেলাপি ঋণের চাপে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা নিলেও তা চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

'বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে আমি মনে করি,' বলেন তিনি।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে কোনো ব্যাংক সহায়তা নিলে তাদের উচ্চ হারে সুদ দিতে হবে এবং তিন মাসের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।'

'কিন্তু ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিলে পরিশোধে দীর্ঘ সময় পাবে, যা তাদের বর্তমান নগদ অর্থের সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে,' বলেন তিনি।

তিনি মনে করেন, হঠাৎ করে আমানতের সুদহার ১৩ শতাংশ বাড়ানোকে খুব বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ওপরে ঘোরাফেরা করছে। যদি মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে আমানতকারীদের দিক থেতে এটি স্বাভাবিক। কারণ মূল্যস্ফীতির হার আমানতের হারের চেয়ে বেশি হলে মানুষ ব্যাংকে অর্থ রেখে খুব বেশি লাভবান হবে না।

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, আমানতের উচ্চ সুদের কারণে ঋণের সুদও বাড়বে। এতে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়বে।

তারা সতর্ক করে বলেছেন, আমানতের উচ্চ সুদহার আমানতকারীদের আরও সমস্যায় ফেলতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে ওই ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদহার বহাল রাখতে না পারলে ইতোমধ্যে টাকা তুলতে সমস্যায় পড়া আমানতকারীদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।

তাছাড়া আমানতের উচ্চ সুদহারে ব্যাংকগুলোর আয় কমবে।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিছু ব্যাংক বড় ধরনের সংকটে থাকায় উচ্চ সুদের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমানতকারীদের সতর্ক হতে হবে।

তার ভাষ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ও ব্যাংকগুলোর পক্ষে আমানতের জন্য এত উচ্চ হারের প্রস্তাব দেওয়া কার্যকর কিনা তা বিশ্লেষণ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আকাশচুম্বী সুদের প্রস্তাব দিয়ে আমানত সংগ্রহ না করে খেলাপি ঋণ আদায় করে আমানত বাড়ানোই ব্যাংকগুলোর জন্য ভালো।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

8h ago