শিক্ষা

পাবনার সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ফেরেনি ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী

করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বার্থে চলতি মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার। দীর্ঘ সময় পর স্কুলে খুললেও ইতোমধ্যে অনেকে বন্ধ করে দিয়ে পড়ালেখা।

করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বার্থে চলতি মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার। দীর্ঘ সময় পর স্কুলে খুললেও ইতোমধ্যে অনেকে বন্ধ করে দিয়ে পড়ালেখা।

ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছাত্রদের অনেকে শুরু করেছে কর্মজীবন।

স্কুল খোলার পর পাবনার সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবাইদা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক দিন পর স্কুলে এসেছি। কিন্তু, অনেক প্রিয় সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। বান্ধবীদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে।'

একই ক্লাসের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সহপাঠীদের অনেকেই এখন মাঠে, কল-কারখানায় কাজ করছে। কর্মস্থলে পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হলে খুব খারাপ লাগে। পারিবারিক কারণে অনেকে ক্লাসে ফিরছে না।'

সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে এখানে ৫৬৩ জন পড়ত। স্কুল খোলার পর দেখা যাচ্ছে ৩০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।'

'ছাত্রীদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছাত্রদের অনেকেই কর্মে ঢুকেছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে দশম শ্রেণিতে ৭৪ জন শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু, মাত্র ৩৯ জন এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছে।'

'বিয়ের পরও বেশ কয়েকজন ছাত্রী ফর্ম পূরণ করেছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবে তাদের বেশিরভাগই স্কুল বিমুখ।'

সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিরুজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান।'

'স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবার থেকে বেশিরভাগ মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ছাত্রদের উপার্জনমুখী কাজে দেওয়া হয়েছে। স্কুল খোলার পর কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

স্কুলের শিক্ষক ও কমিটির নেতৃবৃন্দ সেসব পরিবারে গিয়ে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করার পরও অনেককেই স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, অনেক ছাত্রীর বিয়ের সংবাদ পেয়ে স্কুলের পক্ষ থেকে বাধা দিতে গেলে গ্রামবাসীর বাধায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে আসে। এ ছাড়া, অনেকে গোপনে বিয়ের আয়োজন করায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কিছু করা সম্ভব হয়নি।

স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু সাদুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয় নয় পাবনার অধিকাংশ স্কুলেই অনেক শিক্ষার্থী স্কুল খোলার পর স্কুলমুখী হচ্ছে না। অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে এবং অনেকে কাজে-কর্মে ঢুকে পড়েছে।'

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপস্থিতি পর্যালোচনা করে এ তালিকা তৈরি করা হবে।'

স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থীদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

21h ago