লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
তবে, কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদী বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে জেলার ১০টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রাম ও চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে, স্থানীয় সূত্র বলছে, পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বেশি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ গ্রামের পানিবন্দি কৃষক মেছের আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। গ্রামের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা কলাগাছের ভেলা ও নৌকায় যাতায়াত করছি। গতকাল রাত থেকে বাড়িতে রান্না করা যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছেন।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফলিমারী গ্রামের পানিবন্দি কৃষক দিলবর রহমান (৫৮) বলেন, 'আমরা বুধবার বিকেল থেকে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। গ্রামের শতাধিক বাড়িতে এখন বন্যার পানি। ধরলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধরলা নদীর পানি আরও বাড়ছে।'
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের পানিবন্দি দিনমজুর আলেখা বেওয়া (৫৬) বলেন, 'ঘরের ভেতর বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছি। মুষলধারে বৃষ্টিপাত থাকায় পলিথিন মোড়ানো অস্থায়ী ঝুপড়িতেও সমস্যায় পড়েছি। রান্না করতে না পারায় গতকাল রাত থেকে অর্ধাহারে আছি।'
পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানান লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) মশিউর রহমান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার সকালে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়িগ্রামের সব নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।'
Comments