সিলেটে বন্যায় বিপর্যস্ত ১৩ লাখ মানুষ, সুনামগঞ্জেও বাড়ছে দুর্ভোগ
সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
আজ সকাল ৯টায় সুরমা নদী সিলেট মহানগরী এলাকায় বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, কানাইঘাটে ১২৭ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।
কেন্দ্রের তথ্য মতে, কুশিয়ারা জকিগঞ্জের অমলশীদে ১৫৮ সেন্টিমিটার ও বিয়ানীবাজারের শেওলায় ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সারি-গোয়াইন নদী জৈন্তাপুরের সারিঘাটে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং জাদুকাটা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শক্তিয়ারখলায় বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট ত্রাণ ও পুণর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ৫টি উপজেলা এবং সিলেট মহানগরী এলাকার অন্তত ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ১২ মে থেকে ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'র প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার সব নদীর পানি গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় আগাম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে সুরমা নদী সিলেট মহানগরী পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করায় মহানগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
সুরমা নদী উপচে বন্যার পানি এবং সিলেট নগরীর অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পানিতে নগরীর সুরমা তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা ছাড়াও বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর উপশহর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া ও মাছিমপুরসহ অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ অনেক স্থাপনায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা দেবজ্যোতি দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুরমার পানি বাড়ছে দেখছিলাম। কিন্তু, রাতারাতি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এলাকায় ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছি।'
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) তথ্য অনুসারে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় নগরীর ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুরমা বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হয়ে পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং নগরীর পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে করণীয় কিছুই ছিল না। এখন আমরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকদের খাদ্য সহায়তা সরবরাহে কাজ করছি।'
সিলেট নগরীর একাংশ ছাড়াও আগাম বন্যায় সিলেট জেলার কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়াও, বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলও।
সিলেটের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদ গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলাকে 'দুর্গত অঞ্চল' ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে।
সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিক উদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেছেন যে পরিস্থিতি এখনও 'দুর্গত অঞ্চল' হিসেবে ঘোষণার মতো হয়নি।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট ১২ থেকে ১৪ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা জেলায় ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১২৯ টন চাল এবং ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছি, যা বন্টন করা হচ্ছে।'
এ দিকে, সুনামগঞ্জের সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
গতকাল বিকেল ৩টায় সুরমা নদী সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে এবং জাদুকাটা নদী তাহিরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বন্যা পূর্বাভাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ বুধবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমবে।'
Comments