গ্যাসের দাম বাড়ালে বাজারের আগুন দাবানলে পরিণত হবে: ক্যাব
সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালে বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে আগুন জ্বলছে তা দাবানলে পরিণত হবে বলে মনে করছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
আজ বুধবার ক্যাবের আয়োজনে 'ন্যায্যতা উপেক্ষা করে গ্যাস বাণিজ্য কার স্বার্থে' শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, 'এখন বাজারে আগুন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, পানির মূল্য বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় আরও চড়া হয়ে যাবে।'
বক্তারা বলেন, 'এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়। জনজীবন যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জর্জরিত, সে সময় জ্বালানি তেল, গ্যাস অথবা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আগুনে ঘি ঢালা হবে।'
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সঞ্চালনা করেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, 'গত ২১-২৪ মার্চ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানি করে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার পেট্রোবাংলা গড়ে ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বিইআরসির কারিগরি কমিটি ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ক্যাব ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ (প্রতি ঘনমিটারে ০.১৭ টাকা) কমানোর প্রস্তাব করেছে এবং সব শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য বিদ্যমান মূল্যহার ৯ দশমিক ৬৯ টাকা বহাল রাখতে বলেছে।'
'গণশুনানিতে পেট্রোবাংলাসহ কোনো সংস্থা তাদের প্রস্তাবকে ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ করতে পারেনি। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার ২০ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়ে কারিগরি কমিটির প্রস্তাবও ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ হয়নি। এরপরও ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ হবে। বিইআরসি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে,' বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি রোধে যদি আমরা প্রশাসনিক সমাধান না পাই, তাহলে আদালতের মাধ্যমে সমাধান চাইব।'
সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, 'গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে সবাই লাভবান হতে চাচ্ছে।'
সরকারের নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে অনাগ্রহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে ৩টি কুপ খনন করলে ১টিতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা তা করছি না। সমুদ্র থেকে ভারত, মিয়ানমার গ্যাস উত্তোলন করলেও, আমাদের সরকারকে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখছি না।'
দেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যদি ১০ বছর আগে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করতাম তাহলে আজকে আমাদের বিদেশ থেকে চড়া দামে গ্যাস কিনতে হতো না।'
এ সময় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, 'গ্যাস সরবরাহ এবং উৎপাদনে বাংলাদেশ একটি মাত্র গ্যাসক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে আছে। কোনো কারণে সেটি অকেজো বা সমস্যা হলে কী হবে তা কল্পনা করা যায় না।'
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার প্রমুখ।
Comments