প্রবাসে

প্রবাস চোখে স্বদেশ: আইভী মানে চির সবুজ

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো গোটা দেশের মানুষের চোখ ছিল সেই দিকে। লড়াই করেছিলেন শক্তিশালী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী। 
সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি: সংগৃহীত

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো গোটা দেশের মানুষের চোখ ছিল সেই দিকে। লড়াই করেছিলেন শক্তিশালী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী। 

একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত অন্যজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর বিজয়ী হয়েছিলেন আইভী। তার বিজয়ের পর আমি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে নারায়নগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে একটি মতামত প্রতিবেদন লিখেছিলাম। লেখাটি ছাপা হওয়ার একদিন পর একটি ফোন পেলাম। অন্য প্রান্ত থেকে বললেন, আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে বলছি সেলিনা হায়াত আইভী। তার সঙ্গে কথা হলো দীর্ঘ সময়। তিনি জানালেন, পত্রিকা অফিস থেকে আমার ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন। বিশ্লেষণমূলক লেখাটি তার ভালো লেগেছে জানানোর জন্যই ফোনটি করেছেন, বললেন তিনি। আমি অবাক হই। দেশে এলে তার সঙ্গে যেন দেখা করি, আমন্ত্রণ করলেন। 

এরপর কেটে গেছে ১০ বছর। হয়ে গেছে আরও দুটো নির্বাচন। পর পর ৩টি মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করে হ্যাট্রিক করেছেন তিনি। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের বাসিন্দাদের প্রিয় নেত্রী হয়ে উঠেছেন আইভী রহমান। এর মাঝে আমি দেশে এসেছি অজস্রবার। তার সঙ্গে দেখা হয়নি।

সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে লেখক আকিদুল ইসলাম

এবার দেশে এসে ছোট একটি ম্যাসেজ পাঠালাম, 'দেশে এসেছি। দেখা হলে ভালো লাগবে।' সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, কবে আসতে চান, চলে আসেন।' 

তার বাসার ঠিকানা পাঠালেন। কীভাবে যেতে হবে জানালেন। নতুন করে ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, 'বাসা খুঁজে পেতে অসুবিধা হলে ফোন করবেন।' 

আমি বিস্ময় মানি। অসাধারণ হয়েও একজন মানুষ কীভাবে এমন সাধারণ হতে পারেন? অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে! যেখানে একজন কাউন্সিলর ৩ বার নির্বাচিত হলে মাটিতে পা রেখে হাঁটেন না। 

তার সঙ্গে দেখা হলো প্রথমবারের মতো। তিনি নিজেও পড়া লেখা করেছেন বিদেশে। প্রবাসে সংসার পেতে বসবাস করেছেন দীর্ঘকাল। বললেন সেইসব দিনগুলোর কথা। নারায়ণগঞ্জ নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। বিদেশের দেখা শহরের মতো সাজাতে চান নিজের শহরকে। সহযোগিতা পান না কারও। প্রতিটি কাজে বাধা। জানালেন, মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে আবার চলে যেতে ইচ্ছে করে প্রবাসে কিন্তু খুব বেশি মায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন প্রিয় শহর আর শহরের মানুষের প্রতি। 

আলোচনার এক ফাঁকে বলি, অনেকেরই এই ধারণা যে, আপনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করলে ভোট আরও বেশি পেতেন। আপনারও কি সেই ধারণা? দলের পক্ষেই কথা বললেন তিনি। বলতে হয় বলেই বললেন, সেটা বুঝি। 

উঠে আসবার সময় বললাম, আপনার নামের অর্থ হচ্ছে, চির সবুজ লতা। নামের সঙ্গে আপনার কর্মকাণ্ড মিলে যাচ্ছে। যিনি আপনার নাম রেখেছিলেন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন আপনার ভবিষ্যৎ। 

তিনি বললেন, 'আমার নাম রেখেছিলেন বাবা। সব বাবাই সন্তানের ভবিষ্যৎ দেখতে পান।' 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

5h ago