বাংলাদেশি মনসুর আহমেদ পেলেন ‘ব্রিটিশ এম্পেয়ার পদক’

জনকল্যাণে বিশেষ অবদান, অব্যাহত সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাসেবার স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটেনের রানির মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা 'ব্রিটিশ এম্পেয়ার মেডেল'র (বিইএম) জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি-ব্রিটিশ মনসুর আহমদ।
তিনি বাকিংহাম প্যালেসে রানির রয়্যাল গার্ডেন পার্টিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক গ্রহণ করবেন।
প্রতি বছর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে বেসামরিক বা সামরিক পরিষেবায় মেধাবী ব্যক্তিদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
১৯২২ সালে এই পদক প্রবর্তন করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা পোস্ট-নমিনাল অক্ষর 'BEM' ব্যবহারের অধিকার পাবেন।
মনসুর আহমেদ করোনা মহামারির দুঃসময়ে সময়ে জনগণকে উদারভাবে সহায়তা করেছিলেন। তিনি বয়স্কদের জন্য টেলিফোন পরিষেবা চালু, ওষুধ সরবরাহ, ফুড ব্যাংক প্রকল্পে অংশ নেন এবং লকডাউনের সময় জনকল্যাণের অধিকারের বিষয়ে পরামর্শ দেন।
মনসুর সক্রিয়ভাবে ও উত্সাহের সঙ্গে দুর্বল-বয়স্কদের জন্য কেনাকাটা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পণ্যসহ স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহে অংশ নেন।
এর আগেও, কমিউনিটির কল্যাণে নিরলস পরিশ্রম, অনুপ্রেরণামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য মনসুর আহমেদ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অনেক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

মনসুর আহমদ প্রথম বাংলাদেশি-ব্রিটিশ যিনি ২০২১ সালে ব্রিটিশ সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড (মেডেল অব অনার) অর্জন করেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে আয়োজিত প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টারের অফিসিয়াল অনুষ্ঠানে তাকে বিসিএভি পদক দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 'হাউস অব লর্ডস ব্রিটিশ কমিউনিটি অনারস অ্যাওয়ার্ড'-এ (বিসিএইচ) ভূষিত হন মনসুর আহমদ।
২০২১ সালে তিনি প্রচণ্ড স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মহামারি রোধে কাজ করার জন্য প্রথম বাংলাদেশি-ব্রিটিশ হিসেবে অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের স্বীকৃতি পান।
এর আগের বছর তিনি লন্ডনের মার্টন কাউন্সিল মেয়র কোভিড-১৯ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। ২০২১ সালে মানবসেবায় অনন্য অবদানের জন্য পান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বৃহত্তর লন্ডনে ব্যক্তিগত প্রতিনিধি লর্ড লেফটেন্যান্ট স্যার কেনেথ ওলিসা ওবিই সম্মানজনক স্বীকৃতি।
মনসুর আহমেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে বি. কম (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ১১ বছরেরও বেশি সময় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এ ছাড়াও, তিনি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি), প্রেস্টন ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, এডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব হনলুলু'র (চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস) ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিবিএ, এমবিএ ও এসিসিএ লেভেলে শিক্ষকতা করেছেন।
২০০৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ দক্ষ অভিবাসন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান মনসুর আহমেদ। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান আল শিরকাতুল ইসলামিয়ার অ্যাকাউন্টস ও ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মনসুর আহমেদ যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইএফএ) ও দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার (আইসিএমএআই) ফেলো মেম্বার (এফসিএমএ)।
এশিয়ার বৃহত্তম চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিআইপিএফএ) ও চার্টার্ড ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (সিআইএসআই) ইউকে'র সহযোগী সদস্য (এফসিএসআই)।
মনসুর আহমদ স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দাতব্য সংস্থার পর্যদেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ইউকে'র সদস্য মনসুর আহমদের অসংখ্য নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নাল, ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে ৩ সন্তানের জনক মনসুর আহমদ বলেন, 'ব্রিটিশ সমাজে আমার ক্ষুদ্রসেবা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের এই সম্মাননা পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত-গর্বিত। আমার বিশ্বাস, এ সম্মাননা আমাকে সেবামূলক কাজে আরও বেশি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে।'
Comments