বাংলাদেশের পাশে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসীরা

সিডনি অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত

যারা বাংলাদেশে আছেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে থাকেন। আর যারা প্রবাসে আছেন, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে থাকে। প্রত্যেক প্রবাসীর অন্তরে সারাক্ষণ জেগে থাকে বঙ্গোপসাগর পাড়ের প্রিয় জনপদটি। লাল-সবুজ পতাকার গভীর ভালোবাসা আর মমতা বুকে জড়িয়েই কাটে প্রবাসীদের দিনরাত্রি। এজন্যই প্রবাসের নানা প্রতিকূলতার পরও দেশের সংকটে আর দুর্যোগে তারা বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশে নতুন করে মহামারির ঢেউ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীরা আবারও এক হয়েছেন দেশের নিরন্ন জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে।

অস্ট্রেলিয়াতে ইচ্ছে করলেই কোনো সংগঠন কিংবা কোনো ব্যক্তি ফান্ড রেইজ করতে পারে না। এখানে ‘চ্যারিটি অর্গানাইজেশন’ হিসেবে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হয়। অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশি সংগঠন আছে প্রায় ১৭০টি। কিন্তু, চ্যারিটি হিসেবে নিবন্ধিত আছে ২৫টির মতো। তাই অধিকাংশ সংগঠন একত্রিত হয়ে ফান্ড রেইজিংয়ের আয়োজন করে থাকে।

এ উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেছে অস্ট্রেলিয়ায় লেখক ও সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল’। এই সংগঠনটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি পরিবারকে পাঁচ হাজার ১০০ টাকা ও ২৯টি পরিবারকে তিন হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে। দেশের এই দুর্যোগে এবার এগিয়ে এসেছেন সিডনির তরুণ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম।

সাধারণত দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে সংগঠকরাই অনুদান সংগ্রহের জন্যে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু, এবার একজন তরুণ ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে সবার কাছে দেশের দুর্গত মানুষের জন্যে হাত বাড়িয়েছেন। তিনি ‘টেলিঅজ ফাউন্ডেশন’ থেকে ফান্ড রেইজিং করে ইতোমধ্যেই দেশের অসহায়দের মাঝে অনুদান দিতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত টেলিঅজ ফাউন্ডেশন দেশের ৩৮০টি পরিবারকে সাহায্য করেছে।

একটি প্রশংসিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিশা তানিয়া তাদের জনপ্রিয় সংগঠন ‘ফাগুন হাওয়া’র মাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার অনেকগুলো সংগঠনও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ফ্যাশন ডিজাইন, আমাদের কথা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিডনি, নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স একাডেমী, আবর্তন, নটরাজ ড্যান্স একাডেমী ও বাসভূমি। এ ছাড়াও, দেশের এই দুর্যোগে আরও যে সংগঠনগুলো অনুদান পাঠাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—সিডনি বিডি হাব, মাল্টি কালচারাল সোসাইটি, বাংলাদেশি আইডল, ৩৬০ ইভেন্টস, সিডনি বাঙালি, ফান্ড দ্য ফিউচার, জন্মভূমি টেলিভিশন, জিয়া ফোরাম অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া রিলিফ ডিজাস্টার্স কমিটি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে এই প্রশান্ত মহাসাগর তীরেও। এই জনপদের প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ভালো নেই। চার সপ্তাহের কড়া লকডাউনের ফলে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। যারা ব্যবসা বা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত, তারাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীরা নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা না ভেবে ভাবছেন দেশের অসহায় বিপদগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কথা। প্রত্যেকেই নিজেদের অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় মাতৃভূমিকে ভালোবেসে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago