মেসিডোনিয়ায় ৪ দিন

স্লোভেনিয়াতে আসার পর থেকে মেসিডোনিয়া নামের দেশটির প্রতি আমার আলাদা আগ্রহ কাজ করত। প্রথম দিকে অবশ্য এ আগ্রহের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাঙ্গেলা নামের একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। মেসিডোনিয়ার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয় তখন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে গত মাসের শেষ সপ্তাহে মেসিডোনিয়া ভ্রমণের সুযোগ আসে। সব মিলিয়ে বলকান উপদ্বীপের এ দেশটিতে ৪ দিন অতিবাহিত করি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত যে কোনো দেশের বৈধ ভিসা বা রেসিডেন্ট পারমিট থাকলে কোনো পৃথক ভিসা ছাড়া মেসিডোনিয়া ভ্রমণ করা যায়। ইমিগ্রেশন অফিসার মেসিডোনিয়াতে প্রবেশের সময় পাসপোর্টে একটি অ্যারাইভাল সিল দেন।
৪ দিন মেসিডোনিয়াতে থাকার সুবাদে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কৌচসার্ফিং ও রেডিটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বিগত কয়েক মাসে আরও বেশ কয়েকজন মেসিডোনিয়ানের নৈকট্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এটা ঠিক যে, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাস করা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে মেসিডোনিয়ানদের রক্ষণশীল বলতে হবে। তবে জাতি হিসেবে তারা খুবই অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুবৎসল। পর্যটকদেরকে তারা বিশেষভাবে সমাদর করে।
পুরো ৪ দিনের সফরে দেশটির সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষত ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর তাদের অনেকের কাছ থেকে আলাদা সম্মান পেয়েছি। বিদেশি পর্যটক, বিশেষত বিদেশি লেখক বা বিদেশি সাংবাদিকদের প্রতি তাদের এ আতিথেয়তা এবং বন্ধুবৎসলতার কারণ আছে। বেশিরভাগ মেসিডোনিয়ান রাজনীতি সচেতন। তারা মনেপ্রাণে এমন কোনো দেশকে বন্ধু হিসেবে পাশে পেতে চায়, যে দেশ নিঃস্বার্থভাবে তাদের সঙ্গে কাজ করবে।
মেসিডোনিয়ার একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম ওহরিড। হৃদের তীরে গড়ে উঠা শহরটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশটিতে অসংখ্য পর্যটকের সমাগম হয়। ওহরিড একইসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও সবচেয়ে গভীর হৃদগুলোর একটি। অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মালম্বী মানুষের কাছে ওহরিড একটি পবিত্র তীর্থস্থান। রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লেখার কাজে ব্যবহৃত সিরিলিক বর্ণমালার উদ্ভাবন করেন সেইন্ট সিরিল ও সেইন্ট মেথোডিয়াস নামক ২ ধর্মযাজক।

ধারণা করা হয়, সিরিলিক বর্ণমালার প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল এ ওহরিডে। সেইন্ট সিরিল ও সেইন্ট মেথোডিয়াসের উভয়ই জ্ঞান সাধনার জন্য ওহরিডকে বেছে নিয়েছিলেন। আবার মেসিডোনিয়া তথা স্লাভিক জাতিসত্ত্বার ইতিহাসে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল এ ওহরিডে। ওহরিডের ওল্ড টাউন ভীষণ পর্যটকনন্দিত। মেসিডোনিয়াতে পা রাখার পর প্ৰথম ২ রাত আমি ওহরিডে অতিবাহিত করি।
এআরবিএনবির মাধ্যমে অ্যান্তোনিও নামে স্থানীয় এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওহরিডে ২ রাত থাকার জন্য আমি তার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলাম। অ্যান্তোনিওর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার আলাপ হয়। তার মুখ থেকে মেসিডোনিয়ার ইতিহাস শুনছিলাম। যদিও, তার মতে অতীত সবসময় দেশটির সাধারণ মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলেছে।

১৯১২ সালে প্রথম বলকান যুদ্ধের ফলাফল বলকান উপদ্বীপের দেশগুলোকে উসমানীয় শাসন থেকে মুক্ত করে। গ্রিস ও সার্বিয়া- এ ২টি দেশ প্রথম বলকান যুদ্ধে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এখন বিশ্ব মানচিত্রে বলকান উপদ্বীপের দেশগুলোকে আমরা যেভাবে দেখি, তা মূলত গ্রিস ও সার্বিয়াই নির্ধারণ করেছে। প্রায় ৫০০ বছরের উসমানীয় শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মেসিডোনিয়ার আত্মপ্রকাশের পেছনে এ ২ দেশ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯১৩ সালের ২৯ জুন মেসিডোনিয়াকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে বুলগেরিয়া গ্রিস ও সার্বিয়ার ওপর আক্রমণ চালায়। শুরু হয় দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ। যদিও এ যুদ্ধে গ্রিস ও সার্বিয়ার সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে বুলগেরিয়ানরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সুযোগে রোমানিয়া বুলগেরিয়ার কিছু অংশ দখল করে নেয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়ার নেতৃত্বে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন গঠিত হলে ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা ও কসোভোর মতো মেসিডোনিয়াও যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনে যোগ দেয়।
মেসিডোনিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে সবসময় সার্বিয়ার প্রভাব অত্যন্ত প্রবল। এমনকি ১৯৯২ সালে গণভোটে মেসিডোনিয়া যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, সার্বিয়া সবসময় দেশটির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করেছে। যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশ যেমন- স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া বা বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনাকে যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয়েছে।
অ্যান্তোনিও বলেন, 'সামরিক দিক থেকে আমরা বরাবর দুর্বল। তাই কোনোভাবে যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছিলাম না। গণভোটের মাধ্যমে আমরা ঠিকই স্বাধীন হয়েছি। তবে আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা রিজার্ভের একটা বড় অংশ সার্বিয়া নিয়ে যায়। ফলে স্বাধীনতার পর মেসিডোনিয়া অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক, রাশিয়া ও চীন আমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছে। তবে এর বিনিময়ে তারা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় করছে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তারা আমাদের ব্যবহার করতে চায়।'
'করোনার মধ্যে কোনো দেশ আমাদেরকে টিকা পেতে সেভাবে সহায়তা করে নি। সার্বিয়া আমাদের টিকা দিয়েছে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের থেকে অনেক কিছু নিয়েছে। এখন থেকে সার্বিয়ায় রেজিস্ট্রেশন হওয়া নম্বর প্লেটযুক্ত কোনো গাড়ি ফি ছাড়া মেসিডোনিয়ার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে পার্ক করা যাবে। আমাদের দেশের অর্থোডক্স চার্চগুলোকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সরকার বিভিন্ন বিদেশি সংস্থাকে আমাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তাদের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই', অ্যান্তোনিও যোগ করেন।

বাংলাদেশ বিষয়ে অ্যান্তোনিওকে প্রশ্ন করেছিলাম।
উত্তরে তিনি বলেন, 'যুগোস্লাভিয়া প্রথম দিকেই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুগোস্লাভিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটোর নীতি ছিল সদ্য স্বাধীন সব দেশকে সাহায্য করা এবং এসব দেশ যেন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে প্রবেশ না করে নিরপেক্ষভাবে পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশকে আমরা বন্ধু হিসেবে পাশে পেতে চাই। এটা ঠিক যে, ১৯৯২ সালের পর আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সেভাবে আর জোরদার হয় নি। এ কারণে বাংলাদেশে যেমন মেসিডোনিয়ার দূতাবাস নেই, তেমন মেসিডিনিয়াতেও বাংলাদেশের দূতাবাস নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'মাদার তেরেসা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। যতটুকু জেনেছি, বাংলাদেশেও তিনি একাধিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। মাদার তেরেসার জন্ম হয়েছিল মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কুপিয়েতে এক আলবেনীয় পরিবারে। তাই তাকে কেন্দ্র করে হলেও যেন বাংলাদেশের সঙ্গে মেসিডোনিয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়- সে কামনা করি।'
অ্যান্তোনিওর সুরেই কথা বলেছেন আরেক মেসিডোনিয়ান নাগরিক মারিনা বোজিনোভস্কা। সার্বিয়া থেকে মেসিডোনিয়াতে প্রবেশের সময় তাবানোভচি বর্ডার ক্রসিং এলাকায় আমাকে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মারিনার দায়িত্বশীলতার কারণে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাই। স্কুপিয়েতে তিনি আমাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
স্কুপিয়ের সিটি সেন্টারে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের স্মরণে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের জন্ম হয়েছিল মেসিডোনিয়াতে। তিনি গ্রিক বীর হিসেবে সব জায়গায় পরিচিত হলেও, মেসিডোনিয়ানরা তাকে নিজেদের জাতিসত্ত্বার অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। এ কারণে প্রতিবেশি গ্রিসের সঙ্গে মেসিডোনিয়ার দ্বন্দ্ব সবসময় প্রবল। স্বাধীনতার পর মেসিডোনিয়ার ওপর গ্রিস একাধিকবার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়।
উল্লেখ্য, গ্রিস ছিল দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একমাত্র রাষ্ট্র, যেখানে কমিউনিজমের তেমন প্রভাব ছিল না। গ্রিসের পররাষ্ট্রনীতি ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সমুখী।
মারিনার মতে, গ্রিসের কারণে মেসিডোনিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক সেভাবে জোরালো হয় নি। ২০১৮ সালে গ্রিসের চাপে মেসিডোনিয়া তাদের নাম পরিবর্তন করে উত্তর মেসিডোনিয়া রাখতে বাধ্য হয়।
বুলগেরিয়ার সঙ্গেও মেসিডোনিয়ার সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ নয়। বুলগেরিয়ার সাধারণ মানুষ মনে করেন, জাতিগতভাবে বুলগেরিয়ান ও মেসিডোনিয়ানরা অভিন্ন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, ১০০ বছর আগে মেসিডোনিয়া ও বুলগেরিয়া- এ ২ দেশের ভাষার খুব একটা পার্থক্য ছিল না। পরে সার্বিয়ার নেতৃত্বে মেসিডোনিয়া যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনে যোগ দিলে দেশটির সাধারণ মানুষের ভাষায় সার্বিয়ান ভাষার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতেই মেসিডোনিয়ানরা নিজেদের আলাদা জাতিসত্ত্বার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
মারিনার মতে, বুলগেরিয়া ও গ্রিসের কারণে মেসিডোনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত।
মেসিডোনিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৫ ভাগেরও বেশি মানুষ জাতিগতভাবে আলবেনিয়ান। এনভার হোক্সার শাসন আলবেনিয়াকে দীর্ঘদিন গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এসব কারণে আলবেনিয়ার সঙ্গেও মেসিডোনিয়ার খুব একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। মাঝেমধ্যেই ২ দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে।
মারিনা জানান, প্রায় ৫০০ বছর ধরে মেসিডোনিয়াতে অটোমান শাসন ছিল। এ কারণে মেসিডোনিয়ানরা স্লাভিক হলেও, তাঁদের সঙ্গে তুর্কিদের জেনেটিক্যাল সংমিশ্রণ ঘটেছে।

অনেকে মনে করেন, মেসিডোনিয়ানদের একটি গোত্রের পূর্ব পুরুষ এসেছে আফগানিস্তান বা মধ্য এশিয়ার কোনো দেশ থেকে। এ কারণে নাকি মেসিডোনিয়ার অনেক মানুষের চেহারায় আফগান, উজবেক, কাজাখ বা তাজিখদের ছাপ রয়েছে। এ ছাড়া, আলেকজান্ডার তার সাম্রাজ্য ভারতের একাংশে বর্ধিত করেছিলেন। এমন বেশ কিছু ধারণার কারণে মেসিডোনিয়ার অনেক মানুষ মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি দুর্বল।
বাংলাদেশ বিষয়েও প্রশ্ন করেছিলাম মারিনাকে। অ্যান্তোনিওর মতো তিনিও বাংলাদেশ ও মেসিডোনিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। মারিনা মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মেসিডোনিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী হলে ২ দেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবে।
এটা ঠিক যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় মেসিডোনিয়া অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা শক্তিশালী নয়। এ কারণে দেশটির তরুণ প্রজন্মের অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রিয়াসহ পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। বেকারত্বের হার দেশটিতে অনেক বেশি। তারপরও, বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টর থেকে শুরু করে কৃষি ও কনস্ট্রাকশন খাতে মেসিডোনিয়া বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার হতে পারে। তৈরি পোশাক ও মধু থেকে শুরু করে বিভিন্ন শাক-সবজি, মৌসুমী ফল ও ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য মেসিডোনিয়া হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় বাজার।
শুধু অ্যান্তোনিও বা মারিনাই নন, মেসিডোনিয়াতে আরও অনেকের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণার কথা জানিয়েছেন।
আমার আরেক মেসিডোনিয়ান বন্ধু তানিয়া ইভানোভস্কা একবার আলোচনার ফাঁকে আমাকে বলেছিলেন, আমার লেখার মাধ্যমে যদি মেসিডোনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সত্যিকারের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে— তবে সেটা হবে তাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। এ কারণে মেসিডোনিয়াভিত্তিক আমার কোনো লেখা যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন তার লিংক আমার মেসিডোনিয়ান বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করি। তারা অনেক সময় নিজ আগ্রহে সেগুলো ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শেয়ার দেন। যদিও বাংলা জানা নেই তাদের।
আমার বয়স ২৩ বছরের জীবনে এখন পর্যন্ত ৩০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে মেসিডোনিয়া আমার জীবনের সোনালি অধ্যায়গুলোর একটি। মেসিডনিয়ানদের আতিথিয়েতা আর বন্ধুবাৎসল্য যেমন আমাকে মুগ্ধ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সঙ্গে মেসিডোনিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারকরণে তাদের আগ্রহ আমার মনে আলাদা প্রশান্তির জন্ম দিয়েছে।
লেখক: রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।
Comments