লকডাউন আতংকে ভুগছে সিডনি

অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনি। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যে আবার আঘাত হানতে শুরু করেছে করোনা মহামারি। গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে ৮০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

রাজ্যের রাজধানী সিডনি লকডাউন থেকে বেড়িয়ে আসার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা। এরমধ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ জন।

আগামী দিনে ওমিক্রনের উদ্বেগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। একেবারে শূন্য থেকে মাত্র ১০ সপ্তাহে লাফিয়ে ৮০৪ জনের করোনা শনাক্তের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে ফেডারেল সরকারকেও।

ফেডারেল স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি, ওমিক্রনের মতো ভ্যারিয়েন্টগুলো আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, অনিবার্যভাবে আরও কিছু ভ্যারিয়েন্টকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।'

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চলতি সময়ের ক্রিস্টমাস ও নিউ ইয়ারের পার্টিগুলো নিয়ে খুবই শঙ্কিত। এরইমধ্যে সিডনির কয়েকটি নাইটক্লাব, পাব ও বার থেকে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কেরি চ্যান্ট গতকাল মিডিয়াকে বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে, ক্রিস্টমাসের পার্টিগুলো থেকে ওমিক্রনের সংক্রমণ বর্তমানে আমাদের বর্ধিত সংখ্যার জন্য দায়ী। আমরা সিডনিকে নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ এখানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে সংযুক্ত বেশ কয়েকটি স্থান দেখেছি, যেগুলো আরও বেশি সংক্রমণযোগ্য।'

গত শুক্রবার রাতে নাইটক্লাব 'আর্গাইল হাউজ' থেকে বিপুল সংখ্যকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানে উপস্থিত ৬৫০ জনকে পরীক্ষা করে ১৫০ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া, ৬ জনের মধ্যে পাওয়া গেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।

অস্ট্রেলিয়া কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম টিকাপ্রাপ্ত দেশ। অস্ট্রেলিয়ানদের দেওয়া ভ্যাকসিনগুলো ওমিক্রন থেকে গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজ্য এবং অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগগুলো তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ওমিক্রন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রেখেছে।

অস্ট্রেলিয়ান হেলথ প্রোটেকশন প্রিন্সিপাল কমিটি (এএইচপিপিসি) অত্যন্ত গভীরভাবে ওমিক্রন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দেশগুলোকে অনুসরণ করছে এবং কীভাবে এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

গত ৩০ নভেম্বর জাতীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর চিফ মেডিক্যাল অফিসার আশ্বাস দিয়েছেন যে, অস্ট্রেলিয়া ওমিক্রনজনিত কোভিড-১৯ উত্থান প্রতিরোধের জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুত।

এই আশ্বাসের পরও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্রিস্টমাস এবং নিউ ইয়ারের পার্টিগুলো যে সংক্রমণ ছড়াবে, তা নতুন বছরের শুরুতেই প্রবলভাবে আঘাত হানবে এবং সেই আঘাত আবার নতুন করে নিয়ে যাবে কঠিন লকডাউনের দিকে।

মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের এপিডেমিওলজির প্রধান ডা. জেমস ট্রয় এসবিএস নিউজকে বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া খুব দ্রুতই যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর মতো বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়বে। ওমিক্রন সংক্রমণ এখানেও তীব্রভাবে আঘাত হানবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখেছি যে, ওমিক্রন খুব দ্রুত দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল্টার জায়গা দখল করেছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াতেও ওমিক্রন অভাবনীয়ভাবে সংক্রমিত হবে।'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

22 sectors still pay wages below poverty line

At least 22 sectors in Bangladesh continue to pay their workers much less than what is needed to meet basic human needs.

4h ago