সেই চিরচেনা রূপে ভেনিস

আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে ইতালির জলকন্যা ভেনিস। প্রাণ পেয়েছে ইউরোপের বৈঠকখানা পিয়াচ্ছা সান মারকো বা সান মার্কস স্কয়ার। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন স্বপ্নের শহর ভেনিস দেখতে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে ভেনিস হারায় তার চিরাচরিত রূপ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সবই বদলে যায়। জনমানবহীন শূন্য শহরটির দিকে তাকালে বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে উঠত। বারবার মনে হতো, এটাই কি আমাদের চিরচেনা ভেনিস?
প্রায় দেড় বছর পরে ভেনিসে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছে। এসব পর্যটকদের একটা বড় অংশ ইতালীয় নাগরিক কিংবা অভিবাসী।
ইউরোপীয় দেশগুলোর নাগরিকরা প্লেন, ট্রেন বা অন্যান্য গণপরিবহন এড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভেনিসে আসতেই বেশি পছন্দ করছেন। ভেনিসের প্রবেশ মুখ পিয়াচ্ছালে রোমার পার্কিং সব সময় ভর্তি থাকছে। পর্যটকরা আগে থেকে অনলাইনে পার্কিং বুক করে আসছেন।
ভেনিসের হোটেল, রেস্তোরাঁ, সুভেনিরের দোকানগুলো খুলেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে হাসি।
ভেনিসে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী ব্যবসায়ী আছেন। কয়েক হাজার চাকরিজীবীও আছেন। প্রায় দেড় বছর পর তারা কর্মস্থলে ফিরেছেন। সব কিছু নতুন করে গুছিয়ে নেওয়া চেষ্টা করছেন।
চলতি বছর ভেনিসে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক এসেছেন। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শ থেকে এক হাজার বাংলাদেশি পর্যটক আসছেন ভেনিসে। এসব পর্যটকদের প্রায় সবাই ইতালির অন্যান্য শহরে বসবাস করেন।
ইতালীয় সরকার দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করতে 'ভ্রমণ বোনাস' ঘোষণা করেছে। ইতালির মধ্যে ঘুরতে গেলেই মিলছে মোটা অঙ্কের বোনাস।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভেনিসে শুরু হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। লিদো দি ভেনেসিয়া নামক আইল্যান্ডে আয়োজিত ওই ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করেও ভেনিসের চাঞ্চল্য অনেকটা বেড়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে প্রথম দফায় করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছিল। প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল যে, মরদেহ সৎকার করতেও সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। তবে, অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের এই দেশটি।
দেশটির করোনার সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকার আওতায় আনা হয়েছে। গোটা দেশকে 'হোয়াইট জোন' হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরাও ফিরবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
সব মিলিয়ে ইউরোপের এই দেশটিতে অর্থনীতির চাকা আবারও ঘুরতে শুরু করেছে। সরকার চাচ্ছে এই চাকা যেন আর থেমে না যায়। ফলে বাড়তি সতর্কতার জন্য আগামী শীতের আগেই টিকার তৃতীয় ডোজ শুরু করার কথা ভাবছে।
Comments